চুঁয়াপুরের রেলগেটে রোজকার যন্ত্রণা। — ফাইল চিত্র
রেল অবরোধ, টানা সাত দিনের রিলে অনশন, কোনও কিছুই বহরমপুরের চুঁয়াপুরে উড়ালপুল নির্মাণের জট কাটাতে পারেনি। সেই জট বোধহয় এ বার কাটতে চলেছে। অন্তত তেমনই দাবি জেলা প্রশাসনের।
তবে ঘরপোড়া গরুর সন্দেহ যাচ্ছে না। বহরমপুর এখনও বিশ্বাস করছে না চুঁয়াপুরে রেলসেতু হচ্ছে।
স্বাধীনতার সময় থেকে দাবি ওই উড়ালপুলের। গত শনিবার রাজ্য ও রেলের যৌথ প্রতিনিধি দল চুঁয়াপুর রেলগেট এলাকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। দলে ছিলেন জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। তিনি বলেন, ‘‘আগামী সেপ্টেম্বরে উড়ালপুলের কাজ শুরু হবে। রেল ওই ব্যয়ভার বহন করবে।’’ যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, রাজনৈতিক ঈর্ষার কারণে তিন বছর ধরে উড়ালপুলের কাজ আটকে রেখেছিল রাজ্য! এখন হাইকোর্টের রায়ে রাজ্য রাস্তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ঘটনা যাইহোক, কয়েক দশকের ভোগান্তির পর বহরমপুরের মানুষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘না আচানো পর্যন্ত
বিশ্বাস নেই!’’ সড়কপথে উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গকে যুক্ত করেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই সড়ক চলে গিয়েছে বহরমপুর শহরের বুক চিরে। বহরমপুর শহরে ঢোকার মুখে চুঁয়াপুরে ও পঞ্চাননতলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে রেলের শিয়ালদহ বিভাগের-কৃষ্ণনগর শাখার রেললাইন। ওই রেললাইন দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩২টি ট্রেন চলে। রেল সূত্রের খবর, এর ফলে চুঁয়াপুরে ও সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পঞ্চাননতলায় ৩২ বার রেলগেট বন্ধ করতে হয়। তার ফলে যানজটে ভুগতে হয় বহরমপুরবাসীকে। ভুগতে হয় উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদেরও।
গত বছর মার্চ মাসে গোলাম মুস্তাফা সরকার নামে কংগ্রেসের এক শিক্ষকনেতা জনস্বার্থ মামলা করেন। তাঁর আইনজীবী তুষার মজুমদার বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চের রায় মেনে রাজ্য পূর্ত দফতর ও রেল যৌথ ভাবে এলাকা পরিদর্শন করে। প্রস্তাবিত ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যৌথ সমীক্ষা রিপোর্ট গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডিভিশন বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়। সেই মতো আদালত দ্রুত কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেয়।’’ রেলের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘তারপরও রাজ্য গড়িমসি করায় মাস তিনেক আগে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ওই কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য আর্জি জানাই।’’ যদিও জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও অবশ্য বলেন, ‘‘কোথায় গড়িমসি? সম্প্রতি রেলের সঙ্গে রাজ্যের চার বার বৈঠক হয়। তারপরই উড়ালপুলের কাজ শুরুর
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’
স্বাধীনতার পর থেকে পঞ্চানতলা ও চুঁয়াপুরে রেলের উড়ালপুলের দাবিতে দলমত নির্বিশেষ আন্দোলন গড়ে ওঠে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে পঞ্চানতলা উড়ালপুল নির্মাণের জন্য রেললাইনের দু’পাশে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু করে মাটি তোলা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কোনও অজ্ঞাত কারণে মাঝপথেই সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
রেলযাত্রী সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি এ আর খান বলেন, ‘‘অনেক আন্দোলনের পর ১৯৯৫ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী পঞ্চানতলায় উড়ালপুল নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেন। কিন্ত মার্জিন মানি মাত্র লাখ দশেক টাকা তৎকালীন রাজ্য সরকার না দেওয়ায় কাজ শুরুই হয়নি।’’ অবশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হলে বহরমপুর দু’টি উড়ালপুল নির্মাণের জন্য ফের আন্দোলন জোরদার হয়। কিন্তু উড়ালপুল নির্মাণের জন্য তাঁর কাছ থেকে অনুমোদন মেলেনি।
এর পর ২০১৩ সালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী রেলের প্রতিমন্ত্রী হলে পঞ্চানতলা ও চুঁয়াপুরে রেলের উড়ালপুল প্রকল্পের অনুমোদন দেন। উড়ালপুল ও আন্ডারপাস নির্মাণ করার জন্য দোকানদাররা তাঁদের দোকানঘরও ভেঙে নেয়। অধীর বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য খসড়া নকশা তৈরি করে রাজ্যের পূর্ত দফতরে জমা দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে রাজ্য অনুমোদন দেয়নি।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের অনুমোদন ছাড়াই শিলান্যাস করে অধীর চৌধুরি গিমিক দিতে চেয়েছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy