নিহত রফিক শেখের পরিবার।
মেয়ে ফিরে এসেছে শ্বশুরবাড়ি থেকে, সঙ্গে এক বছরের শিশু। বাড়িতে কম বয়সীদের মধ্যে ওই বছর সাতাশের মেয়ে, বাকিরা ছুটে-খেটে রুজির খোঁজ করবেন, এমন নেই কেউ। ধান রোয়ার পরে কর্মহীন বসে না থেকে তাই দু’টি বাড়তি আয়ের খোঁজে রফিক শেখ গিয়েছিলেন কাশ্মীরের আপেল বাগানে। তাঁর নিথর শরীর ফিরে আসার পরে শোক শুকিয়ে এসেছে, এখন রোদ্দুরের মতো গনগনে বাস্তব বলছে— সংসারটা টানবে কে!
এ কাজে অবশ্য নতুন নন রফিক। গত দশ বছর ধরে যাচ্ছেন। ‘গোলা-গুলি চলত্যাসে’ স্ত্রী সামিরুনের বিবির পিছুটান শুনে বলেছিলেন, ‘‘কিস্যু অইব না। দেহ না যাব আর আসব!’
সে কথাটা এখনও ঘুরে ঘুরে কানে বাজে সামিরুনের। বলছেন, ‘‘জোর করে ধরেই বা রাখব কী করে, সংসারটাও তো টানতে হবে!’’ রফিক বাড়ি করেছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে। লাখ টাকার এই দেনা মেটানোর ভরসা ছিল কাশ্মীরের কাজ। এ বারেও সেই ধার শোধ করতেই তাঁর পাড়ি দেওয়া। বাড়িতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকেরা আসছেন, আর নিতান্তই সমবেদনা জানাতে আসা সেই সব মানুষজনকে দেখলেই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছেন সামিরুন— ধারের টাকা চাইবে না তো!
বাড়িতে আত্মীয় পরিজনের ভিড়, প্রতিবেশী-পরিজনের আনাগোনা, তারই মাঝে একরত্তি অবোধ নাতির দস্যিপনায় শোকের কুয়াশা কাটছে।
উঠোনে বসে স্ত্রী তবুও আক্ষেপ করে চলছেন, ‘‘মাথার উপর বাড়ি তৈরির লক্ষ টাকার দেনা, বিয়ে দিয়েও তিন বছর ধরে মেয়ে এ বাড়িতেই। আর ভাল লাগে না।’’ এখন সেই মেয়েকে আঁকড়েই বাঁচতে চান সমিরুন, ‘‘এ বার মন্ত্রী-আমলারা যদি মেয়েটার একটা চাকরি করে দেন!’’
মাধ্যমিক পাশ পারভিন বলছেন, “পুরুষ শাসিত সমাজে মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়া যে কতটা জরুরি, এখন বুঝছি। মায়ের ক্ষেত্রেও, আমার ক্ষেত্রেও। এই সব দুর্ঘটনা তো বলে কয়ে আসে না। মাধ্যমিক তো পাশ করেছি, একটা চাকরি পেলে...!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy