দলীয় কর্মীদের শৃঙ্খলা, আচরণ নিয়ে দিন কয়েক আগে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগে বিধানসভায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে তিনি দলীয় শৃঙ্খলা, আচার-আচরণ নিয়ে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘অনেকেই ক্ষমা চাইছে। কিন্তু বার বার ক্ষমা করা যায় না।’’ দলনেত্রীর সেই নির্দেশের পরে গোষ্ঠীকোন্দলে ‘জর্জরিত’ মুর্শিদাবাদে দলের কোন্দল কি মিটবে? সেই
প্রশ্ন উঠছে।
তৃণমূলের অন্দরের একটি সূত্রে খবর, নওদা, রেজিনগর, ভরতপুর-সহ জেলার বিভিন্ন বিধানসভায় বিধায়কদের সঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিদের ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ সফরে এসেছিলেন। সেই দিন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খানের বিরুদ্ধে ‘গোষ্ঠী’ করার অভিযোগ তুলেছিলেন হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ জানানোর কথা বলেছিলেন। জেলা জুড়ে ব্লকে ব্লকে শাসক দলের নেতাদের ‘কোন্দল’ মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যেই আসে। সেই কোন্দল কতটা মেটানো সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠেছে
দলের অন্দরেই।
তবে বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় দলে মনোমালিন্য থাকতে পারে কিন্তু গোষ্ঠীকোন্দল নেই। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমরা এই জেলায় ঐক্যবদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন, তা সকলকে মেনে চলার কথা বলব।’’ ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে আমার বিধানসভা এলাকার দু’জন ব্লক সভাপতি অসহযোগিতা করে চলেছেন। দলের জেলার চেয়ারম্যান এবং জেলা সভাপতির অঙ্গুলিহেলনে তাঁরা স্বমহিমায় পদে রয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় ওঁদের পরিবর্তন করে নতুন ব্লক সভাপতি করার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নাম পাঠিয়েছিলাম। পরিবর্তনের আশ্বাস দেওয়া হলেও আজও তা করা হয়নি।’’ এরপর হুমায়ুন আরও বলেন, ‘‘গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিদি (মমতা) বিধায়কদের কাছ থেকে ব্লক সভাপতি হিসেবে তিন জন করে নাম চেয়েছেন। আমি ওই দু’টি ব্লকের তিন জন করে ব্লক সভাপতির নামের তালিকা দেব। শুধু তাই নয়, শাখা সংগঠনের ব্লকের সভাপতিদের জন্য নামের
তালিকা দেব।’’
হুমায়ুনের দাবি, তালিকা দেওয়ার পরেও যদি তাঁর বিধানসভা এলাকার পুরনো ব্লক সভাপতিদের রেখে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি ভরতপুর বিধানসভায় আগামী বছর ভোটে লড়বেন না।’’ তবে তিনি কী করবেন, তা হুমায়ুন জানাতে চাননি।
নওদা ব্লকেও তৃণমূলে বহুদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে দলের ব্লক সভাপতির সঙ্গে বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খানের। বিরোধ গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই চলছে। মাঝেমধ্যেই তাঁদের সেই বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে।
সাহিনা বলেন, ‘‘এখনই বুঝতে পারছি না, কোন্দল মিটবে কি না। তবে দিদির নির্দেশের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করবে।’’ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরীর বিধানসভা এলাকাতেও বিভিন্ন সময়ে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। রবিউল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমবে বলেই আশা করছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)