এক সময়ে টিভিতে সরকারি বিজ্ঞাপন হতো— সিগারেট আপনার, ধোঁয়াও আপনার, ধোঁয়াটা না-হয় আপনার কাছেই রাখুন!
সেই যুক্তিতে ভর করেই রাস্তায় ধূমপায়ীদের ধরে জরিমানা করতে নেমেছিল মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তা কতটা আইনসঙ্গত, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার স্বাস্থ্য দফতর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জনা পনেরো লোককে জরিমানা করার পরেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। মঙ্গলবারও দিনভর তরজা চলেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে চায়ের ঠেকে, পাড়ার মোড়ে। এমনকী দুই জেলার স্বাস্থ্য দফতরের লোকজন খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত।
সিগারেট ও অন্য তামাকজাত দ্রব্য রোধ আইন ২০০৩ বলছে, ‘পাবলিক প্লেস’ অর্থাৎ জনপরিসরে ধূমপান করা যাবে না। কিন্তু মাঠঘাট, প্রাঙ্গণ বা রাস্তার মতো খোলা জায়গা জনপরিসর হিসেবে গণ্য হবে না। এ ব্যাপারে ধোঁয়াশা যাতে না থাকে তার জন্য নির্দিষ্ট করে হাসপাতাল ভবন বা আদালত ভবন উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে বিড়ি-সিগারেট খাওয়া মানা সেখানে ‘ধূমপান নিষেধ’ লেখা বোর্ড ঝোলানোও আবশ্যিক। জনপরিসরে ধূমপান করলে ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
কী বলছে আইন
মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেই গত সোমবার ‘প্রকাশ্যে ধূমপান’ ধরতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তার জন্য পোস্টারও ছাপানো হয়। আগামী ২৮ মে ফের অভিযান চালানোর কথা ছিল। তবে তার বদলে ৩১ মে, ‘বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস’-এ অভিযান চালানোর চিন্তাভাবনা চলছে।
এই চেষ্টার সদুদ্দেশ্য নিয়ে সিংহ ভাগ নাগরিকেরই কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু ‘জনপরিসর’-এর বদলে ‘প্রকাশ্যে’ কথাটা ব্যবহার ঠিক কি না এবং উদ্দেশ্য মহৎ হলেও আইন লঙ্ঘন করা উচিত কি না, তা নিয়েই বিতর্ক চলছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, উন্মুক্ত স্থান হওয়ায় রাস্তাঘাটে ধূমপান করা আইনত অপরাধ নয়। ফলে বিতর্ক গড়িয়েই চলেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্মলেন্দু ভট্টাচার্য নামে এক জন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, “আইনে যদি থেকেই থাকে তো সেই আইন আগেই হয়েছে, এত দিনে বলবৎ হচ্ছে কেন?” রাকিবুল শেখ নামে এক জনের আক্ষেপ, “খুব ভাল কথা। কিন্তু চলন্ত বাসে-ট্রেনে ধূমপানের বিরোধিতা করে কারও সমর্থন পাইনি।’’ কারও দাবি, এতে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হাত পড়ছে। কেউ আবার এ জি গার্ডিনার খুলে প্রমাণ দিচ্ছেন, ব্যক্তি স্বাধীনতা মানে যা খুশি করা নয়। তোমার ধোঁয়া আমার নাকে লাগলে, জরিমানা দিতে হবে বইকী! সিগারেট-বিড়ি বিক্রির উপরে রাশ না টেনে শুধু ধরপাকড়ে কতটা কাজের কাজ হবে তা নিয়েও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
এ দিন মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের আইনি দিকটা যাঁরা দেখেন, তাঁদের সব কিছু খতিয়ে দেখতে বলেছি। আইন যা বলছে, সেই অনুসারেই কাজ হবে।’’ তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘‘এক জন সচেতন নাগরিক হিসেবে যত্রতত্র সিগারেট-বিড়ি না খাওয়াই ভাল বলে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি।’’ নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের মতে, ‘‘আগে দরকার মানুষকে সচেতন করা। তাই জনবহুল এলাকায় অবিলম্বে ফ্লেক্স লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’’
কার্যত একই কথা বলছেন দুই জেলার বিশিষ্ট নাগরিকেরাও। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নাগরিকদের মঙ্গলের জন্যই আইন তৈরি হয় এবং চেতনার বিকাশের সঙ্গে তা যুগে-যুগে পাল্টেও যায়। চেতনাই আসল কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy