অহেতুক প্রাণহানি যাতে না হয়, কারও বড়সড় ক্ষতি না করেও যাতে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া যায় জনতাকে, তার জন্যই ছররার আমদানি। অথচ সেই ‘নিরীহ’ ছররাই চোখের আলো কেড়েছে নদিয়া থেকে কাশ্মীরে।
রাতের অন্ধকারে বিএসএফ জওয়ানদের গুলিতে সীমান্ত-পার পাচারে যুক্ত লোকজনের মৃত্যুর ঘটনা তো ছিলই। মাঝে-মাঝে স্রেফ সন্দেহের জেরে প্রাণ যাচ্ছিল নিরীহদেরও। এলাকাবাসী তো বটেই, মানবাধিকার সংগঠনগুলি বারবার এ নিয়ে সরব হচ্ছিল। শেষে ২০১২ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তেও ছররা ব্যবহার করতে শুরু করে বিএসএফ।
কিন্তু তাতেও কি অবস্থাটা খুব বেশি পাল্টেছে?
মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, কাশ্মীরের মতো না হলেও ছররার ক্ষত সহ্য করতে হয়েছে সীমান্তবর্তী কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার অনেককে। রানিনগরে এক জনের মৃত্যুর অভিযোগ ছিলই। চাপড়া, তেহট্ট বা ধানতলায় বারবার ছররা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। বিএসএফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসা মানবাধিকার কর্মী কিরীটী রায়ের মতে, “ছররা চালানো পুরোপুরি বেআইনি। এর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকতার পরিষদের নিন্দার মুখে পড়ে ভারত সরকারকে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়েছে। তার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হল না!”
কেন ছররা ছোড়ার প্রয়োজন পড়ল? বিএসএফ কর্তাদের দাবি, সীমান্তের চোরাচালানকারীদের বেশির ভাগই সশস্ত্র। বাধা দিতে গেলে অনেকে মিলে হামলা করে। তাই আত্মরক্ষার জন্যই জওয়ানেরা গুলি ছুড়তে বাধ্য হতেন। এমনই এক শীতের সন্ধ্যায় সহপাঠীদের সঙ্গে পিঠে ব্যাগ দোলাতে-দোলাতে বর্ডার রোড ধরে বাড়ি ফেরা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী খুকুলি খাতুনের পেট ফুঁড়ে দিয়েছিল গুলি। দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতেই শেষে ছররার মতো ‘নন-লেথাল ওয়েপন” ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ। কিন্তু তা কি নিয়ম মেনে হচ্ছে? কাশ্মীরে ছররায় বহু জন অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সিআরপি বলেছিল, কোমরের উপরে যেন ছররা ছোড়া না হয়। সেই নীতি কি মেনে চলে বাংলাদেশ সীমান্তের বিএসএফ? বিএসএফের ডিআইজি জর্জ মানজুরান বলেন, “আমরা তো জওয়ানদের সব সময়েই বলি গুলি না চালাতে। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে গুলি চালালেও হাঁটুর নীচে।” তা হলে ছররা কী করে চোখে-মুখে লাগছে? তাঁর ব্যাখ্যা, “ছররা তো তাক করে মারা যায় না। তবে জওয়ানেরা চেষ্টা করেন নীচের দিকে ছুঁড়তে।”
তবু যদি ফস্কে যায়, কর্তারা আর কী-ই বা করতে পারেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy