বিক্ষোভ তৃণমূলের। বুধবার ধুবুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কৃষ্ণনগর ২ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূলই। যদিও ওই পঞ্চায়েত সমিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই বিক্ষোভের জেরে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারকে আক্রমণের শুযোগ পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। শাসক দলের অস্বস্তি আরও বেড়েছে গোটা ঘটনা রাজ্যের এক মন্ত্রীর এলাকায় ঘটায়। জেলা নেতৃত্বের একাংশের মতে, নিজেদের পিঠ বাঁচাতে গিয়ে দল তথা নেত্রীর মুখ পুড়িয়েছেন ব্লক নেতারা।
কৃষ্ণনগর ২ ব্লকে আবাস প্লাসের তালিকায় ১০ হাজার আটশো জনের নাম ছিল। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, ভিলেজ পুলিশ ছাড়াও ওই তালিকার ১০ শতাংশ নাম বিডিও, তিন শতাংশ মহকুমাশাসক এবং দুই শতাংশ জেলাশাসকের তরফে খতিয়ে দেখা হয়েছে। বাদ গিয়েছে প্রায় ১ হাজার আটশো নাম। তালিকা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হওয়ার পরেই বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধির নাম উঠে আসে, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ। বিডিও নিজে বেশ কিছু বাড়িতে গিয়ে অযোগ্যদের চিহ্নিত করে তালিকা থেকে নাম কেটে দেন। তার মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের স্ত্রী থেকে শুরু করে একাধিক নেতার নাম ছিল বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিডিও-র দেওয়া চুড়ান্ত তালিকায় নাম রয়েছে ৯,০৫৯ জনের। তৃণমূলের দাবি, বাদ যাওয়া প্রায় আঠারোশো নামের মধ্যে প্রায় পাঁচশো নাম রয়েছে যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য। তাঁরা যাতে ঘর পান বা তাঁদের নাম যাতে বাদ দেওয়া না হয় তার জন্যই এ দিন ব্লক তৃণমূলের পক্ষ থেকে কয়েকশো লোকের মিছিল নিয়ে গিয়ে ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিডিও-র কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়।
এই বিক্ষোভ কি রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরল না? তৃণমূলের কৃষ্ণনগর ২ ব্লক সভাপতি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “মোটেও না। আমরা আরও স্বচ্ছ তালিকা তৈরি দাবিতে এই কর্মসূচি নিয়েছি।” তাঁর দাবি, “প্রশাসনের কর্তা ও কর্মীদের মধ্যে একটা শ্রেণি সরকারের বদনাম করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে দরিদ্র, গৃহহীন যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য তাঁদের অনেকের নাম বাদ দিয়েছে। এই চক্রে বিডিও নিজেও জড়িত।” বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, “এসব একেবারে ভুল কথা। যা করেছি তা সরকারি নির্দেশিকা মেনেই করেছি। নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে কোন কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
তৃণমূল নেতারা যা-ই বলুন না, এই বিক্ষোভের পিছনে অন্য কারণ খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা। এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “আমাদের কাছে খবর আছে, বিডিও তৃণমূল নেতাদের কথা শুনে অযোগ্য লোকজনের নাম রাখেননি বলেই তাঁর উপর এ ভাবে চাপ তৈরি করা হচ্ছে।” আর সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত বিশ্বাস দাবি করেন, “তৃণমূল নেতারা ঘর দেওয়ার নাম করে যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল, ব্লক অফিস সেই সব অযোগ্যদের নাম বাদ দেওয়ায় ওই নেতারা বিপাকে পড়েছেন। নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তাঁরা বিডিও-র উপর দায় চাপানোর নাটক করছেন।”
তৃণমূলের কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের একাংশের প্রশ্ন, কার নির্দেশে বা অনুমতিতে এই ধরনের ‘আত্মঘাতী বিক্ষোভ’ করা হল? এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “ব্লক নেতৃত্ব নিজেদের মতো করে কর্মসূচি নিয়েছেন। ঠিক কী ঘটেছে তা আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy