Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
tmc

টিএমসিপি-র গোষ্ঠী সংঘর্ষ রুখল পুলিশ  

কলেজ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ  টিএমসিপি-র বেশ কিছু কর্মী বাঁশ-লাঠি হাতে কলেজে আসে।a

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে অশান্ত হল কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ চত্বর। উভয় পক্ষই একে অন্যকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। শুক্রবার দুপুরে এই গোলমাল দেখে ভয়ে চিৎকার-ছোটাছুটি শুরু করে দেন সাধারণ পড়ুয়ারা। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার আমনদীপের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোরও অভিযোগ রয়েছে, যদিও পুলিশ তা স্বীকার করেনি। রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।

গভর্নমেন্ট কলেজে টিএমসিপি-র গোষ্ঠী কোন্দল নতুন নয়, বরং দীর্ঘ দিনের। দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজিতে বারবার কেঁপে উঠেছে কলেজ চত্বর। চলেছে গুলিও। কিন্তু তার পরেও গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব। সম্প্রতি সংগঠনের শহর সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পরে সেই কোন্দল আরও প্রবল আকার নিতে শুরু করেছে। শুক্রবারের ঘটনা তারই ফল বলে মনে করছে সংগঠনের অনেকে।

কলেজ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ টিএমসিপি-র বেশ কিছু কর্মী বাঁশ-লাঠি হাতে কলেজে আসে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সদ্য অপসারিত শহর সভাপতি সুমিত ঘোষ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাইরে থেকে আসা ছেলেরা কলেজে ঢুকতে গেলে ভিতর থেকে গেট আটকে বাধা দেন বর্তমান শহর সভাপতি সুজয় হালদার ও তাঁর গোষ্ঠীর ছেলেরা। এই নিয়ে তৈরি হয় উত্তেজনা। সেই সময়ে গেটের দু’পাশ থেকে ইট ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।

আগাম খবর থাকায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ আগে থেকেই কলেজের কাছে হাজির ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তারা দু’পক্ষের মাঝখানে পড়ে যায়। সংখ্যায় বেশি না থাকায় তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিল না। খবর পেয়ে প্রচুর পুলিশ নিয়ে চলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এর পরেই দু’পক্ষ রণে ভঙ্গ দেয়।

সুমিতের অভিযোগ, “আমাদের ছেলেদের ওরা কলেজে ঢুকতে দিচ্ছে না। গেলে মারধর করছে। ফর্মটা পর্যন্ত পূরণ করতে দিচ্ছে না।” তিনি দাবি করেন, “বহিরাগতেরা কলেজ চত্বর দখল করে বসে আছে। আমরা শুধু ওদের বলতে গিয়েছিলাম যে ফর্মটা যেন পূরণ করতে দেয়। তাতেই ওরা বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। ইট ছুড়তে থাকে। আমরা তখন সরে আসি।” সুজয়ের পাল্টা দাবি, “এত দিন ওরা কলেজে অনেক দুর্নীতি করে এসেছে। আমরা তা বন্ধ করে দিয়েছি। সেই রাগ থেকেই ওরা বহিরাগতদের নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। তাদের কাছে দা-বাঁশ-লাঠি ছিল। ওরা কলেজ দখল করতে এসেছিল।”

এ দিন প্রথম বর্ষের পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড নিতে এসেছিলেন বহু পড়ুয়া। বাংলা এমএ-র পরীক্ষাও চলছিল। তাঁরা প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলা এই তাণ্ডবের মধ্যে পড়ে যান। গন্ডগোল থামার পরে অনেকেই অ্যাডমিট কার্ড না-নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে এক ছাত্রী বলেন, “কলেজে পড়তে এসেছি না যুদ্ধের ময়দানে এসেছি, সেটাই বুঝতে পারছি না। নিত্য দিন এই গন্ডগোল আর সহ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, কেন এই কলেজে ভর্তি হতে গেলাম!”

তবে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সৌরিক মুখোপাধ্যায় অবশ্য এত কিছুর পরেও দাবি করছেন, “আমাদের সংগঠনের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নয়। আসলে এটা ছাত্রদের বিষয়ই নয়। দুই পাড়ার মধ্যে গন্ডগোল।” তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ওখানে ঠিক কী ঘটেছে, জানি না। তবে আমরা বারবারই বলেছি, কলেজে বহিরাগত যেন না ঢোকে। কলেজটা কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরই থাকবে।’’

কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পঞ্চানন মণ্ডল বলছেন, “বাইরে থেকে কিছু ছেলে ইট ছুড়ছিল। তবে এত দূর থেকে তাদের চিনতে পারিনি। পুলিশকে বলেছি, নিরাপত্তা আরও বাড়াতে।”

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Group Conflict West Bengal Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE