তাঁর নাম কী, কোথায় বাড়ি জানা নেই কারও। এক মাস তাঁর ঠাঁই হয়েছিল লালগোলার ভবানীপুর এলাকার যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে। বছর পঞ্চাশের হিন্দিভাষী ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলতেন, ‘‘মুঝে উঁহা জানা হ্যায়।’’ কোথায় তা জানার চেষ্টা অনেকেই করেছিলেন কিন্তু জানা যায়নি। তবে তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
কেউ ভাত তো কেউ রুটি, আবার কেউ দিয়েছে ফলও। এ রকম করেই দিন কাটছিল তাঁর। তবে গত তিন দিন থেকে শরীর খারাপে ভুগছিলেন তিনি। সেটা চোখে পড়ে কিছু কলেজ পড়ুয়ার। ইদের দিনে ইদের নমাজ শেষ করে তাঁরা বেরিয়েছিলেন কেরলর বন্যা ত্রানের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে। সেই সময় তারা দেখতে পায় ওই মহিলাকে। কথা বলার মতও ক্ষমতা ছিল না তাঁর। দেরি করেননি পড়ুয়ারা। যার পকেটে যা ছিল তাই জোগাড় করে তাঁকে ভর্তি করে গিয়েছিলেন কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছাত্রদের কাছে না থাকায় খবর দেওয়া হয় লালগেলা থানার ওসি বিপ্লব কর্মকারকে।
এই খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি। তারপর মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বিপ্লব জানান, তার চিকিৎসার সমস্ত খরচ তিনিই বহন করবেন। তার পর আর দেরি করেননি কলেজ পড়ুয়ারা। দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁরা। এই বিষয়ে লালগোলা কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘উনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন এটা শুনেই খুব আনন্দ হচ্ছে, তবে বিপ্লববাবু এগিয়ে না আসলে এটা সম্ভব হত না।’’ লালগোলার ওসি বিপ্লব কর্মকার বলেন, ‘‘আমি তখনই বেশি খুশি হব, যে দিন ওঁকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে ওঁর পরিবারকে খুঁজে তাঁদের হাতে তুলে দিতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy