Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ত্রাণ কে দেবে, জলে নামল পুলিশই

চার দিন দেখা মেলেনি ত্রাণের। পাঁচ দিনের দিন হাজির পুলিশ। প্রথমে বেশ ঘাবড়েই গিয়েছিলেন কালীনগরের বানভাসিরা। পরে দেখলেন, ধরপাকড় করতে নয়। পুলিশ এসেছে ত্রাণ নিয়ে। পুলিশের এমন ভূমিকা দেখে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীনগর রেল স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ পুলিশ কেমন পুলিশ!’’ এ দিন নবদ্বীপ থানার আইসি তপনকুমার মিশ্র-সহ প্রায় জনা পনেরো পুলিশকর্মী এসেছিলেন প্রায় পাঁচশো লোকের জন্য রান্না করা খিচুড়ি এবং পানীয় জল নিয়ে।

কালীনগর স্টেশনে চলছে পরিবেশন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

কালীনগর স্টেশনে চলছে পরিবেশন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

চার দিন দেখা মেলেনি ত্রাণের। পাঁচ দিনের দিন হাজির পুলিশ। প্রথমে বেশ ঘাবড়েই গিয়েছিলেন কালীনগরের বানভাসিরা। পরে দেখলেন, ধরপাকড় করতে নয়। পুলিশ এসেছে ত্রাণ নিয়ে।
পুলিশের এমন ভূমিকা দেখে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীনগর রেল স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ পুলিশ কেমন পুলিশ!’’
এ দিন নবদ্বীপ থানার আইসি তপনকুমার মিশ্র-সহ প্রায় জনা পনেরো পুলিশকর্মী এসেছিলেন প্রায় পাঁচশো লোকের জন্য রান্না করা খিচুড়ি এবং পানীয় জল নিয়ে। প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নেওয়া প্রায় পাঁচশো বানভাসিকে নিজেরাই পরিবেশন করে খাওয়ালেন খিচুড়ি ও সব্জি। সঙ্গে পরিস্রুত পানীয় জল। পুলিশের এমন কাণ্ড দেখে নাসির শেখ, রাধারানী বিশ্বাস, কওসর শেখেরা রীতিমতো তাজ্জব। বলছেন, ‘‘এমনটাও আবার হয় নাকি! এমন পুলিশ এই প্রথম দেখলাম।’’
অথৈ সমুদ্রের মতো চারদিকে ঘোলা জল। মাঝে একখণ্ড দ্বীপের মতো জেগে আছে কালীনগর রেল স্টেশন। বন্যায় ডুবে গিয়েছে ঘরবাড়ি। বানভাসি হয়ে সেখানেই পাঁচ দিনের শিশুকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মহিশুড়ার বিলকিস বেওয়া। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর মা। দিনকয়েক আগে মারা গিয়েছেন বিলকিসের স্বামী। মহিশুড়ার আরও অনেকে বাধ্য হয়েছেন ওই প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নিতে। সদ্যোজাতকে বুকে করে প্ল্যাটফর্মের শেডের নীচেই কেটে গিয়েছে টানা চার দিন। হাঁস মুরগী আর ছাগলের সঙ্গে আশ্রয় যদিও বা একটু জুটল কিন্তু উপযুক্ত আহার মেলেনি বিলকিস ও একরত্তি ওই শিশুর।
পূর্বরেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার কালিনগর স্টেশনের ওই একই প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নিয়েছেন সত্তর ছুঁইছুঁই রাধারানি বিশ্বাস। রবিবার দুপুরে জলের প্রবল তোড়ে ঘর ভেঙে পড়তেই মুন্সিপাড়ার মায়া ছেড়ে পড়শিদের সঙ্গে পরিবারের আরও চার সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্ল্যাটফর্মে। সম্বল বলতে ছিল সরকারি সাহায্যে পাওয়া কেজি দুয়েক চাল। “ওই দু’কেজি চালে পাঁচটা পেট কতদিন চলতে পারে? চার দিন পার হয়ে গিয়েছে, একবারের জন্যও কেউ খোঁজ নেয়নি।’’ রীতিমতো ক্ষুব্ধ রাধারানিদেবী।
বিলকিস কিংবা রাধারানিদেবীর মতো এ ভাবেই নবদ্বীপের মহিশুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঝেরচড়া, মুন্সিপাড়া, কালীনগরের বাসিন্দারা গত রবিবার থেকে প্ল্যাটফর্মের উপরে দিন কাটাচ্ছেন। মহিলা, পুরুষ, শিশু-সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় শ’পাঁচেক। সঙ্গে গরু, ছাগল, মোষ, হাঁস, মুরগিও রয়েছে। সকলেরই একটাই ক্ষোভ, এমন বিপদের দিনে কেউ এগিয়ে আসেনি ওঁদের সাহায্য করতে।

নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “বন্যায় বিভিন্ন এলাকার খোঁজ খবর করতে গিয়েই কালীনগর স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের বিষয়টি জানতে পারি। এরপরই আমরা থানার অফিসার-কর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওঁদের জন্য খাবার এবং জলের ব্যবস্থা করি।” এ দিন ৬০ কেজি চাল, ৩৫ কেজি ডাল এবং ৪০ কেজি সব্জি দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে কালীনগরে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা। নবদ্বীপ থানার প্রতিটি কর্মী তাঁদের সাধ্য মতো অর্থ দিয়েছেন এই কাজে। খরচের বাকি অর্থ দিয়েছেন তপনবাবু।

এ দিন খাবার পরিবেশন করার সময়ে পুলিশের নজরে পড়ে সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে গবাদি পশুর পাশে কোনওরকমে শুয়ে আছেন বিলকিশ। শিশু ও মা দু’জনেরই শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তপনবাবু সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই দু’জনকে মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

পুলিশের এমন ভূমিকায় আপ্লুত বানভাসিরা। তবে সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তাও তাঁদের পিছু ছাড়ছে না। বলছেন, ‘‘আজ না হয় কিছু জুটল। কাল কী হবে?’’ নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “ওখানে যাতে দ্রুত সাহায্য পৌঁছয় তার ব্যবস্থা করছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE