খেজুর রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত এক ব্যক্তি। — ফাইল চিত্র।
রবিবার, পৌষ সংক্রান্তির সকালে গত কয়েক দিনের তুলনায় শীত খানিক কম। তবু ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল চার দিক। তার মধ্যেই ভোর রাত থেকে সাইকেল করে ভাঁড়-বোঝাই খেজুর গুড় নিয়ে বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়েন ওঁরা। মাজদিয়ার গুড়ের পাইকারি হাটে পৌঁছোন ব্যাবসায়ীরা।
মাজদিয়ার খেজুর গুড়ের হাট বহু প্রাচীন। শীতের সময়ে প্রতি বুধ ও রবিবার সকালে এই গুড়ের হাট বসে। গুড়ের আমদানি ভাল হলে বিক্রেতাদের ভিড় বাজার ছাড়িয়ে বাস রাস্তায় এসে পৌঁছায়। এ দিন ওই বাস রাস্তার এক দিকে সাইকেল নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিক্রেতারা। এলাকার বাসিন্দাদের কাছেই জানা গেল, মাজদিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মাটিতে খুব ভাল খেজুর গাছ হয়। তাই শীতে গুড়ও হয় প্রচুর। যদিও বর্তমানে চাষের জমি, ফলের বাগান তৈরি, বসবাস অঞ্চল বাড়ানোর জন্য অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে আর সে জায়গায় নতুন গাছ লাগানোর ব্যাপারেও সেই রকম উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না বলে মত এলাকাবাসীর। তবুও এখনও ভাল খেজুর গুড় বলতে সারা রাজ্যে নদিয়ার মাজদিয়ার বিশেষ পরিচিতি। দেখা গেল, নৈহাটি থেকে আসা সঞ্জয় বিশ্বাস বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে একটা কাঠি দিয়ে গুড়ের হাঁড়ি থেকে একটু গুড় তুলে শোঁকেন। প্রয়োজনে মুখে দিয়ে স্বাদ নিয়ে গুড়ের মান বুঝে দরদাম করেন। সঞ্জয় ২২ বছর ধরে গুড়ের পাইকারি ব্যবসা করছেন মাজদিয়ার গুড়ের হাটে। তাঁর দাবি, এখন গন্ধ শুঁকেই বলতে পারেন, কোন গুড় খাঁটি, কোন গুড়ে কতটা চিনি আছে। সঞ্জয়ের মতো খড়দহের সত্যজিৎ সাহা ভোর রাতে খড়দা থেকে ট্রেনে মাজদিয়া এসেছেন পাইকারি গুড় কিনতে। তাঁর কাছেই জানা গেল, গত বছরের চেয়ে এই বছর গুড়ের আমদানি ভাল, গুড়ের মানও ভাল।
হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা আনন্দ বিশ্বাস, বিধান বিশ্বাসেরা বলছেন, ‘‘এই বছর বেশ কিছু দিন হল জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। পরিষ্কার আকাশ, ভাল শীত, শুকনো গাছ এমন কিছু কারণে খেজুর গাছে রস ঘন আর মিষ্টি হয়। সেগুলো এই বছর হওয়ায় ভাল রস হয়েছে। গুড়ও ভাল হয়েছে তাই। বাজার জমেছে।’’ তবে সংক্রান্তির আগে দিন দুই কুয়াশার কারণে গাছ ভিজে থাকায় সে সময়ে গুড়ের মান ভাল হয়নি বলেও জানা গেল।
হাটের মধ্যে একটা বড় পাত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে কেনা গুড়ের হাঁড়ির মুখে লেবেল দিয়ে সাজিয়ে রাখছিলেন নৈহাটি থেকে গুড় কিনতে আসা গুড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী মনি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাছেই জানা গেল, দিন দিন গুড়ের চাহিদা বাড়লেও গাছ কমে যাওয়া, নতুন প্রজন্মের গুড় তৈরির কাজে অনিহা-সহ নানা কারণে হাটে গুড়ের আমদানি কমছে। অন্য দিকে, এলাকার মানুষের কাছে শোনা গেল গুড়ের হাটে নাকি খুব ভাল মানের গুড় সাধারণত আসে না। ভাল গুড় চাষির বাড়ি থেকেই বেশি দামে বিক্রি হয়ে যায়। হাটে যা আসে, তা মাঝারি মানের। মাঝারি দামের চিনি মেশানো। চিনি মেশানোর কারণ হিসাবে গুড় চাষিরা মূলত গুড় তৈরির খরচ কমানোর কথাই বলতে চাইলেন। হাটে গুড়ের পাইকারি দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। যা বাজারে কম বেশি ১৫০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হয়। সেখানে বাড়িতে ভাল জাতের গুড় তৈরি করে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কিলো দরে সরাসরি বিক্রি করতে পারেন চাষিরা। চিনি মেশালে গুড় তৈরির জ্বালানির খরচ যেমন কম হয়, গুড় দেখতেও ভাল লাগে। হাটে কম দামে গুড় দেওয়া সম্ভব হয়। তবে এই শীতে রস ভাল হওয়ায় এই বছর গুড়ে চিনির মাত্রা কম। গুড়ের মান তুলনায় ভাল বলেই দাবি পাইকারদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy