ভাঙছে নদীর পাড়। দেখাচ্ছেন স্থানীয়েরা। নিজস্ব চিত্র
নদী পাড় থেকে মাত্র কয়েক ফুট কয়েক দূরে একটি ছোট্ট দোকান। দোকান বলতে মুলিবাঁশ আর টিন দিয়ে ঘেরা ছোট একটাি জায়গা। ছোট-বড় জারে ভরা নানা কিসিমের বিস্কুট। রঙিন কাগজে মোড়া খান কতক ‘বাপুজি কেক’।
দোকানেরন আয়তনে ছোট হলেও বহু ঘটনার সাক্ষী। দশ বছরে ভাগীরথীর ভাঙনের কারণে দোকানের ঠাঁই বদল হয়েছে বহুবার। তাতেও রক্ষা নেই। নদী ফের দুয়ারে করা নাড়ছে।
মালিক বছর পঞ্চাশে বয়সের মহেশ্বরী বিশ্বাস। বাড়ি চাকদহের শিবতলা ঘাটে। ভাঙনের কথা উঠতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “এর আগে কমপক্ষে ৮ আট বার আমাদের দোকান নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। বাড়িটা একটু দূরে করেছি। আর বলে এখনও কিছু হয়নি। গত দু’বছর ভাঙন সে ভাবে হয়নি বলে রক্ষা। হয়তো এ বার ঠাঁই নাড়তে হবে।”
কী যেন ভাবতে ভাবতে তিনি বলেন, “সে দিনের কথা কোনও দিন ভুলতে পারব না। ঘরে ঘুমিয়ে রয়েছি। পড়েছিলাম। রাত তখন ৯টা হবে। এমন সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার শব্দ। ঘরে থেকে বুঝতে পারিনি, নদী বাড়ির ঘরের পাশে চলে এসেছে। আলো জ্বালিয়ে ঘরের বাইরে বেরোতে দেখি, যেমন জলের গতি,
তেমনই তার গর্জন।”
সে দিন নদীর ওই রূপ দেখেমহেশ্বরী তিনি ভেব নেন, ভেবেছিলেন রাতটুকু থেকে সকালে বাড়ি ছাড়বেন। কিন্তু নদীর ওই রূপ দেখে বাড়িতে বেশি ক্ষণ থাকার সাহস পাননি। নিরাপদের হবে হবে না। আবার ভেবেছিলাম, রাতটা কোন রকমে এই ঘরের কাটিয়ে যাই। একের পর এক গাছ, বিঘার পর বিঘা চাষের জমি সেভাবে জলে তলিয়ে যাচ্ছে, তাতে দেখে এখানে রাত কাটানো খুব একটা সঠিক কাজ হবে না। ককোলের দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সেই রাতেই ঘর ছেড়েছিলেনাম। সেই রাতে আশ্রয় নেন এক প্রতিবেশীির ঘরে । মহেশ্বরী বলেন, “আশ্রয় নিয়েছিলাম। পর দিন সকাল নদীর পাড়ে এসে গিয়ে দেখিদেখি, সেদিন রাতে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলা। তা না হলে হয়ত বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত। যেখানে আমাদের আমাদের ঘর বাড়ি ছিল সেটা কমপক্ষে পঞ্চাশ হাত দূরে চলে গিয়েছে। যেখানে ছিল। বোঝা যাচ্ছিল, সেটা কমপক্ষে দশ মিটার দূরে চলে গিয়েছে। সে দিন যদি বাড়িতেই থাকতাম তবে রাত বাস করলে আর জীবনমরতে হত। রক্ষা কার যেত না।”
বর্তমান কল্যাণী ব্লকের চান্দুরিয়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালোপাড়া গ্রামে বাড়ি বারান্দায় বসে নদীর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছিলেন বছর সত্তর বয়েসের খোকন বিশ্বাসের। বারান্দায় বসে নদীর দিকে তাকিয়েছিলেন। বাড়ি তার ঘর থেকে নদী মাত্র কয়েক ফুট দূরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদী। দেখেই বোঝা যাচ্ছিলে, একবার ভাঙন শুরু হলে আর তাঁর ঘর রক্ষা থাকবে না। করা যাবে না। অতীতের ভাঙনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বছর সত্তরের খোকনতিনি বলেন, “চাষজমি, ভিটেমাটি তো গিয়েছেই, ” আমরা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। একসময় তিন বিঘা চাষের জমি এবং এক বিঘা জমির উপরে বাড়ি ছিল। সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের ঘর বাড়ি তো গিয়েছেই, আমি একদিন যে স্কুলে পড়েছিলাতাম, তাও চলে গিয়েছে নদীতে। যে মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করেছি, সেই মাঠও।” তিনি জানান, তাও একই ভাবে বিলীন গিয়েছে নদীতে। বছর দশের আগে নদী থেকে খানিক দূরে জীবন বাঁচাতে এখানে এসে তিন কাঠা তিনেক জমিতে ঘর বাড়ি গড়েছিলেন। করে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আবার কঠিন লড়াইয়ের মুখে দাঁড়িয়েছি। সেই বাড়িও ভাঙনের মুখে। শুরু হলে আর হয়ত এখানে থাকা যাবে না।”
তাঁর প্রতিবেশীি পীযূুসষ পাড়ুরুই জানানবলেন, “বাড়িতে কত রকমের গাছে ছিল। চাষের জমি ছিল। সব নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। সব শেষ হয়ে গিয়েছে। এক সময় আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬টা বুথ ছিল। এখন ভাঙনে মাত্র ৫পাঁচটিতে এসে ঠেকেছে। এ সবই হয়েছে তাঁর চোখের সামনে। তিনবার বাড়ি ভেঙে্গেছে তিন বার। বছর পনেরো হয়েছে, শেষ বারের মতো নদী থেকে এখনে একটু এস দূরে সরে এসে বসবাস শুরু হয়েছিকরছেন। কিন্তু নদী এখন সেই বাড়ির সামনে। তিনি বলেন, “এ বার আবার অন্য কোথাওয় যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।” পাশ থেকে কথার খেই ধরেন তিনি বলেন, “এত দিন মাছ ধরে জীবন কাটাচ্ছিলাম। এখন নদীতে মাছও পাওয়া যাচ্ছে না।” বছর ৪৪ পঁয়তাল্লিশের বয়েসের ভ্রমর বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে বছর দশেক আগে এই অঞ্চলের বিশ্বাসপাড়ায় বসবাস শুরু করেছি। নিজের জমি হারিয়ে এখন অপরের অন্যের জমিতে চাষ করছি।”
কল্যাণীর বি ডি ও সোমনাথ দে বলেন, “ওই এলাকায় এখন আর ভাগীরথীর ভাঙন হচ্ছে না। এলাকাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি সেচ দফতরের। তাদেরকে জানানোর পর আমরা ব্লক এবং কল্যাণী মহকুমা ডেভলপমেন্ট মনিটারিং কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলচবা আলোচনা করেছি।হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy