রাতের রাস্তা ব্যস্তই, রঘুনাথগঞ্জে।
কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও ট্রাক বাসের কামাই নেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। দিব্যি চলছে টোটো, অটো, ছোট গাড়িও। খোলা থাকছে দোকানপাটও।
সম্প্রতি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা ৪০ পর্যন্ত এক ঘণ্টার সফরে স্পষ্ট হল রাতের কার্ফু কার্যত লিখিত নির্দেশ বই কিছুই নয়। কার্ফু ভাঙলে ধরবে কে? কোথাও কোনও পুলিশি পাহারা নেই। মানুষের সচেতনতা তো দূর অস্ত। একই ছবি বৃহস্পতিবার রাতেরও।
মোটর বাইকে দু’জন আমরা। প্রথম গন্তব্য উমরপুর মোড়। সামনেই বিদ্যুতের খুঁটিতে নো এন্ট্রি বোর্ড ঝুলছে। দাঁড়িয়ে ৮/৯ জন লোক। কারও কাঁধে ব্যাগ, কারওর পিঠে। কেউ বা দাঁড়িয়ে বাইক নিয়ে। বেশির ভাগই দাঁড়িয়ে বাস ধরবেন বলে। দু’জন যাবেন মিত্রপুরে, খুঁজছেন অটো। বাইক নিয়ে জরুর থেকে এসেছে এক যুবক। জামাইবাবু ফিরবেন কৃষ্ণনগর থেকে। তাঁকে নেওয়ার জন্য। ছোট ছোট গুমটির বেশির ভাগ দোকানই খোলা। প্রায় সবই চা, বিস্কুট ও খাবারের। লোকজনের জটলা সেগুলির সামনেই।
একটু এগিয়েই মুরারইয়ের সড়কে উমরপুর মোড় দিয়ে তখন ঢুকছে একটি বেসরকারি বাস। গেট খুলে দাঁড়াতেই নামলেন দু’জন যাত্রী। এক জন মহিলা। কীসে যাবেন? জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “দেখি টোটো পাই কি না?”
তবে চাদর, টুপি, মাফলারে গলা, মুখ ঢাকা। অন্যান্য সাধারণ রাতের মতোই কার্ফুর রাতের উমরপুরের ব্যস্ততা কোনও ফারাক নেই। গুমটির প্রায় সব দোকানই খোলা।
দাঁড়িয়ে গরম চায়ে চুমুক দিয়েই প্রশ্নটা ছুড়লাম, ‘‘রাতে তো কার্ফু জারি রয়েছে, তা হলে দোকান খোলা? রাস্তায় এত লোক?”
দোকানদারের উত্তর, “এত শীতের রাতে প্রয়োজনে পড়েই তো সবাই পথে বেরিয়েছে। আমরা না থাকলে চা, বিস্কুটটাও জুটবে না। তাই আছি।” কথা না বাড়িয়ে এ বার আহিরণের সুতির পথে। তবে সে দিকে দোকান পাট তেমন নেই। বাসও দাঁড়ায় না। তাই জনশূন্য সেদিকের জাতীয় সড়কে দু’চারটি বাস ও ট্রাক ছাড়া লোকজন দেখা গেল না সে ভাবে।
ফের উমরপুর হয়েই এ বার শহরের মধ্যে। অন্যান্য দিনের মতই দাদাঠাকুর মোড়ে আলোকজ্জ্বল গুমটির দোকানের সামনে দাঁড়ানো বাইক। গুটি পাঁচেক তরুণ। পাশেই প্রতাপপুর মোড়। পর পর খোলা গুমটির প্রায় সব ক’টি দোকানই।
ফুলতলায় জনহীন ভাগীরথী সেতুর উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল দুটি অটো। ঘড়িতে রাত ১২টা ৩৫। পাশেই দাঁড়িয়ে টোটোর সারি, রাতের যাত্রীর প্রতীক্ষায়। টোটোচালক জিয়ারুল শেখ জানেন নৈশ কার্ফুর কথা। অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর, “আমরা না থাকলে বিপদে পড়া যাত্রীদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে কে? উমরপুরে প্রয়োজনে বাসটাও তো ধরাতে হবে? করোনার বাজারে সংসারটা চালাতে তাই রাতই ভরসা। এত গাড়ি যে দিনের বেলায় সে ভাবে রোজগার নেই।”
এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক যাবেন আহিরণে। এক আত্মীয় মারা গেছেন খবর পেয়েই বেরিয়েছেন বাড়ি থেকে রাতেই। টোটোর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরদাম চলছে। তার প্রশ্ন, “আচ্ছা রাতে কার্ফু কেন? করোনা কী রাতেই হয়, দিনের বেলা কী করোনা মুক্ত? মিছিল, মিটিং তো বন্ধ হয় না।” বোঝা গেল কার্ফু চলছে নামেই।
এক ঘণ্টার রাতের সফরে চোখে কোথাও পড়ল না এ কজন পুলিশেরও উপস্থিতি। রাতের স্বাভাবিক জঙ্গিপুর একটুও বদলায়নি করোনার রাতের কার্ফুতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy