সাগরদিধির ফল নিয়ে চিন্তায় মুখ্যমন্ত্রী। — ফাইল চিত্র।
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে বিধানসভা উপ-নির্বাচনের ফলাফলে বিপর্যয়ের পর আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না তৃণমূল।
বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের হাতে চলে গিয়েছে সাগরদিঘি। সংখ্যালঘুপ্রধান এলাকা মানেই তৃণমূলের জয় একরকম পাকা—এমন বিশ্বাস এক ধাক্কায় চূর্ণ করে দিয়েছে এই ফলাফল। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে নদিয়ায় সংখ্যালঘুদের জন্য উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি যাওয়া শুরু করেছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল। সাগরদিঘির বিপর্যের পর সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে শাসক দল এখন মরিয়া।
চাপড়ায় প্রায় ৭০ শতাংশ, পলাশিপাড়া ও কালীগঞ্জ প্রায় ৬৫ শতাংশ, নাকাশিপাড়া প্রায় ৫৬ শতাংশ, করিমপুর প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ শতাংশ, তেহট্টে প্রায় ৪০ শতংশ সংখ্যালঘু ভোটার। এই ভোটারদের ধরে রাখতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের জন্য স্কলারশিপ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে হস্টেল, ইমাম ভাতা, কবরস্থানে পাঁচিল দেওয়া-সহ একাধিক প্রকল্পের কথা সংখ্যালঘুদের মনে করিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।
সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় একেবারে বুথ স্তরে সংগঠনকে মজবুত ও সক্রিয় করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সেলের নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি জুলফিকার আলি খান দাবি করেছেন, “রাজ্যর অন্য বাসিন্দাদের মতো সংখ্যালঘুদের এখনও দিদির উপরেই ভরসা আছে। তবে বিরোধীদের অপপ্রচারের মোকাবিলা করার জন্য বুথ স্তরে আমরা জনসংযোগ বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছি।”
নদিয়ার উত্তরে সংখ্যালঘুরাই রাজনৈতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কারণ তারাই এই এলাকায় সংঘ্যাগড়িষ্ট। উদ্বাস্তু ও মতুয়া প্রধান জেলার দক্ষিণ অংশ হাতছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। এবার কোন কারণে সংখ্যালঘু ভোটে ধস নামলে গোটা জেলাতেই অনেক কিছু ওলোটপাটল হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
নদিয়া জেলার দক্ষিণে মূলত উদ্বাস্তু ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ। লোকসভা ভোটের সময় থেকে তারা বিজেপির দিকেই মূলত ছিলেন। সেখানে লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভাতেও কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে জেলার উত্তর অংশই তৃণমূলের ক্ষমতা ও মুখ রক্ষা করতে পারে। এত দিন ওই এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের উপরে ভরসা করে কার্যত নিশ্চিন্তে ছিলেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু তাঁদের ওই আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে সাগরদিঘি।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে চাপড়া, কালীগঞ্জ ও পলাশিপাড়ার মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত তিনটি বিধানসভা এলাকায় বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকার জন্য শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ী হতে পেরেছিল তৃণমূল। মূলত সংখ্যালঘু ভোটারদের কারণেই বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগর-উত্তর কেন্দ্রটি ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলিতে জয়ের মুখ দেখতে পেয়েছিল তৃণমূল।
নদিয়া জেলা পরিষদে এ বার আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫২টি। তার মধ্যে ২৯টির মতো আসন আছে উদ্বাস্তু ও মতুয়া প্রধান দক্ষিণে। বাকি ২৩টি আছে সংখ্যালঘু-প্রধান উত্তরে। তৃণমূলেরই অনেকে মনে করছেন, উত্তরের আসনগুলি জিততে না পারলে জেলা পরিষদই ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সেই ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে আর স্বস্তিতে নেই তৃণমূল।
সাগরদিঘির ভোটে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক আর অটুট নেই। সেই ভোট ব্যাঙ্ক অনেকটাই সিপিএম-কংগ্রেসের দিকে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। সাগরদিঘির আগে থেকেই নদিয়ার উত্তরে সংখ্যালঘু এলাকায় সিপিএমের মিটিং-মিছিলে ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল। সেটা বুঝতে পেরে এই এলাকায় একের পর এক কর্মসূচিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ একাধিক নেতা উপস্থিত হতে শুরু করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy