মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২ জানুয়ারি নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে বসছেন তিনি। —ফাইল চিত্র।
২০২৫ সালে কোনও বড় নির্বাচন নেই রাজ্যে। তবে আগামী বছর শেষ হলেই বিধানসভা ভোট এসে পড়বে। আর ২০২৬ সালের সেই ভোটের লক্ষ্যে নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২ জানুয়ারি নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন তিনি। রাজ্য, জেলা এবং ব্লক স্তরের বিভিন্ন সরকারি কাজের পর্যালোচনা করবেন। আমলা মহলের অনেকের বক্তব্য, প্রশাসনে ঝাঁকুনি দিতেই ওই বৈঠক করবেন তিনি। সারা বছরের সরকারি কাজের দিশা দিতে চাইবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক এই বৈঠকের কথা ঘোষণা করেছেন।
আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের কোষাগার থেকে ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে আবাসের টাকা দিতে শুরু করেছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের ভোটের আগে আরও ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে আবাসের টাকা দেওয়া হবে। তা ছাড়া রাস্তা, জনস্বাস্থ্য, পানীয় জলের সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে জেলায় জেলায়। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে প্রশাসনিক তৎপরতা চাইছেন মমতা। ২ তারিখের বৈঠক থেকে সেই সংক্রান্ত বার্তা দেওয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০১১ সাল থেকে রাজ্যে টানা তিন বার সরকার গড়েছে তৃণমূল। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়। মমতার মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিকও সেটা জানেন। তিনি এ-ও জানেন, সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে কী ভাবে ম্লান করে দেওয়া যায়। এ বিষয়ে মমতার ‘হাতিয়ার’ সরকারি প্রকল্পই। বর্তমানে বিরোধী দলগুলি দৃশ্যত ছন্নছাড়া। বিভিন্ন সময়ে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের বিরোধী হয়ে উঠছে তৃণমূলই। বিরোধীরা থাকছেই না।
নাটকীয় কিছু না ঘটে গেলে বিধানসভা ভোট হতে পারে ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ। তার জন্য এখনও এক বছরের বেশি সময় বাকি। সেই সময় নষ্ট করতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের আধিকারিকদের একাংশ এবং তৃণমূলেরও একাংশের মতে, প্রশাসনের নিচুতলার কিছু কর্মী ও আধিকারিকের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে প্রকল্পের কাজ শ্লথ হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই এই কর্মী ও আধিকারিকেরা প্রকল্পের অগ্রগতির খোঁজখবর রাখেন না। ফলে সরকারও অবগত থাকে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুধু সরকারি আধিকারিকদের একটি অংশের এই মনোভাবের কারণেই প্রকল্পের কাজ থমকে থাকে। শাসকদলের প্রথম সারির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এর ফলে স্থানীয় স্তরে দলের উপর প্রভাব পড়ে। কারণ, মানুষ সরকারি আধিকারিকদের চেনেন না। তাঁরা নিজের এলাকার তৃণমূল কর্মী বা নেতাকেই চেনেন।’’
সরকারি কাজে গতি আনতে ইতিমধ্যেই একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করছে রাজ্য সরকার। দফতরের ঠান্ডা ঘরে বসে সরকারি কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট আর জমা দিতে পারবেন না আধিকারিকেরা। সশরীরে তাঁদের যেতে হবে মাঠে-ময়দানে। ‘ফাঁকিবাজি’ ধরতে এই নতুন অ্যাপ আনছে রাজ্য সরকার। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে অর্থ দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নবান্ন ইতিমধ্যে একটি হেল্প ডেস্কও তৈরি করেছে। জেলাগুলির ব্লক এবং মহকুমা স্তর থেকে যে তথ্য আসবে রাজ্য সরকারের কাছে, তা তদারকি (‘মনিটর’) করবে ওই ডেস্ক।
সদরে শপিং মল
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে শপিং মল তৈরি করা হবে। কলকাতা ও শহরতলিতে শপিং মল যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও, জেলাগুলিতে এই সংখ্যা কিছুটা কম। তাই প্রতিটি জেলার সদর শহরে একটি করে শপিং মল তৈরির ভাবনার কথা জানান তিনি। মমতা জানান, শপিং মল তৈরির জন্য ইচ্ছুক সংস্থাকে জমি দেবে রাজ্য সরকার। তবে সেই শপিং মলের দু’টি তলায় জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে জায়গা দিতে হবে। এর ফলে নিজেদের হাতে তৈরি জিনিস শপিং মলে বিক্রির সুযোগ পাবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তা ছাড়া শপিং মলের নীচের তলায় একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা এবং একেবারে উপরের তলায় একটি করে সিনেমাহলের ব্যবস্থা করার ভাবনার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বিষেয় তাঁকে যে টলিউডের অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন, তা-ও জানান মমতা। কলকাতায় আলিপুর চিড়িয়াখানার উল্টো দিকেও এই ধরনের একটি শপিং মল তৈরি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে অর্ধেক অংশ থাকবে ‘লেদার হাব’-এর জন্য। চামড়ার তৈরি ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করা যাবে সেখানে। বাকি অর্ধেকাংশ মমতা রাখতে চান ‘বাংলার শাড়ি’র জন্য।
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি
আগামী ৬ জানুয়ারি গঙ্গাসাগরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখবেন তিনি। ৬ জানুয়ারি প্রথমে তিনি যাবেন ভারত সেবাশ্রমে। তার পরে সেখান থেকে যাবেন কপিল মুনির আশ্রমে। ৬ জানুয়ারি গঙ্গাসাগরেই থাকবেন। মেলার প্রস্তুতি দেখভাল করে ৭ জানুয়ারি কলকাতায় ফিরবেন। গঙ্গাসাগর মেলার পুণ্যার্থীদের জন্য রাজ্য সরকার প্রতি বারই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীও প্রতি বারই নিজে গিয়ে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে আসেন। গঙ্গাসাগর মেলার বড় অংশের দায়িত্ব থাকে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের হাতে। এ ছাড়াও, সেচ, বিদ্যুৎ, খাদ্য, বিপর্যয় মোকাবিলা, পূর্ত ও পঞ্চায়েতের মতো দফতরগুলিকেও কাজে লাগানো হয়। কলকাতা থেকে পুণ্যার্থীদের গঙ্গাসাগর মেলায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকে পরিবহণ দফতর। গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার পর ৮ জানুয়ারি মিলেনিয়াম পার্কের একটি মেলায় যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই একটি ভেসেলের উদ্বোধন করবেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘হাব’
আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশ্বের প্রথম সারির প্রতিটি দেশ বর্তমানে জোর দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-র উপর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনার ঝোঁকও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বার কলকাতাতেও তৈরি হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘হাব’! বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আইটিসি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর একটি গ্লোবাল হাব তৈরি করতে চাইছে। ওই গ্লোবাল হাবের জন্য ভবনটির কাজও প্রায় শেষের দিকে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, আইটিসি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাবের পাশাপাশি আরও দু’টি প্রোজেক্টের বিষয়ে আগ্রহী। রাজ্য সরকার সেগুলি সময় মতো দেখে দেবে বলে আশ্বস্ত করেন মমতা। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাবটি তৈরি হলে রাজ্যে কর্মসংস্থানও তৈরি হতে পারে বলে আশা করছেন অনেকে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরকালে কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর কারখানা তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছেন আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, দেশের ‘সেমিকন্ডাক্টর বিপ্লব’-এ নেতৃত্ব দিতে চলেছে কলকাতা। এ বার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাব নিয়েও আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী।
ফেব্রুয়ারিতে বিজিবিএস
আগামী ৫-৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস) আয়োজিত হবে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি বিজিবিএস-এর জন্য একটি প্রস্তুতি বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে সম্মেলনের সূচনা হবে। দু’দিনের এই সম্মেলনে থাকবে একাধিক বাণিজ্য বিষয়ক বৈঠক, দেশীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রদর্শনী। একই সঙ্গে অনুষ্ঠান চলবে বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টার এবং বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণেও। সরকারি সূত্রে খবর, বড়, ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি, পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, পর্যটন, পরিবহণ, চলচ্চিত্র ইত্যাদি ক্ষেত্র ভাগ করে আগেই কয়েকটি সেক্টর কমিটি গড়া হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy