বাজারে প্রতিমা সেন। পঞ্চায়েতে জেতা প্রার্থী। নবদ্বীপে। —নিজস্ব চিত্র।
মায়াপুরের হুলোর ঘাট কালীমন্দির চত্বরের বাজারে তাঁকে ঘিরে রেখেছে খরিদ্দারের দল। টাটকা আনাজের ঝাঁকার সামনে বসে সেই ভিড় সামলে কথা বলার বিশেষ ফুরসত পাচ্ছিলেন না প্রতিমা সেন। ছোটখাট চেহারার মধ্যবয়সী মহিলাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মায়াপুরে বিজেপির হয়ে একটি মাত্র আসনে জিতে তিনিই দলের মুখরক্ষা করেছেন।
নবদ্বীপ ব্লকের মায়াপুরে-বামুনপুকুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি কেবলমাত্র ১৩ নম্বর বুথের একটি আসনে জিততে পেরেছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিমা। এলাকায় দীর্ঘ দিনের সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচিত তিনি এবং স্বামী অরুণ সেন। খরিদ্দার একটু হালকা হতেই জানান, পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে এটা তাঁর দ্বিতীয় জয়।
“আমার স্বামী বাজপেয়ী-আদবানির আমল থেকে বিজেপি করে আসছেন। ওঁর সংস্পর্শে এসে আমিও এই দলকেই ভালবাসি। এর আগে ১৯৯৮ সালে বিজেপি-তৃণমূল জোটের হয়ে এখান থেকেই জিতেছিলাম। আর এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে জিতেছি।”
যে অঞ্চল থেকে প্রতিমা জয়লাভ করেছেন, সেখানে বরাবরই বিজেপির দাপট বেশি। বছরখানেক আগে হঠাৎ এলাকায় বিজেপির বহু দিনের পরিচিত মুখ এবং পঞ্চায়েত সদস্য ঝন্টু সরকার, দল বদলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সব হিসেবনিকেশ বদলে যায়। বিপাকে পড়ে যায় বিজেপি। সঙ্কট কালে স্থানীয় নেতৃত্ব বেছে নেন বহু দিনের নির্ভরযোগ্য কর্মী প্রতিমাকে। প্রার্থী নির্বাচন যে ঠিক ছিল ভোটের ফলাফলেই তার প্রমাণ মিলেছে।
দল পালটে ঝন্টু সরকার এবারও পুরনো জায়গা ১৩ নম্বর বুথে তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এলাকায় দীর্ঘ দিনের বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভোটও চলে আসবে সম্ভবত এমনই হিসাব কষে ছিল তৃণমূল। কিন্তু তেমনটা হতে দেননি প্রতিমা। তাঁর কথায়, “এত দিন ধরে যাঁকে জেতানোর জন্য ভোট দিয়েছি, প্রচার করেছি, তিনি হঠাৎ দলবদলে ফেলায় খুব খারাপ লেগেছিল। তখনই ঠিক করেছিলাম এর জবাব দিতেই হবে। মানুষ ওঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।”
সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী প্রতিমার নিজের বুথে যাবতীয় তথ্য পরিসংখ্যান ঠোঁটস্থ। জানালেন, জোড়া প্রার্থীর ওই বুথে মোট ভোটার ছিল ১২৯৫ জন। এবারে পোল হয় ৮৯৬টি ভোট। তার মধ্যে ৩৮৮ পেয়েছেন প্রতিমা নিজে। তৃণমূল পেয়েছে ৩৫৩টি ভোট। সিপিএম পেয়েছে ৪৯টি ভোট। তাঁর জয়ের ব্যবধান ৩৫ ভোট।
খুব সকালে স্বামী চলে যান ধুবুলিয়ার পাইকারি বাজার থেকে আনাজ কিনতে। সকাল ৭টার মধ্যে সেই আনাজ নিয়ে বাজারে বসে পড়েন প্রতিমা। এখন পঞ্চায়েতের জন্য সময় কী ভাবে দেবেন? তিনি বলেন, “দুপুর ১২টার মধ্যে বাজার শেষ হয়ে যায়। কোনও অসুবিধা হবে না। আগেও করেছি। দুই ছেলে-বউমা, আমরা দু’জন— সব মিলিয়ে বড় সংসার। আয়ের রাস্তা ঠিক রাখতেই হবে।”
এক সময়ে কিছু দিন উপপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করা প্রতিমা জানান, তাঁর প্রধান কাজ হবে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা। মায়াপুর হুলোর ঘাট থেকে ইস্কন মন্দিরগামী রাস্তায় পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। সরকারি ট্যাপকল বা নলকূপ কিছুই নেই দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার রাস্তায়। তিনি বলেন, “এত বড় অঞ্চল, বাইরে থেকে এত যাত্রী আসেন, অথচ পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত করেনি পঞ্চায়েত। সবাইকে জল কিনে খেতে হয়। তাই এবার লড়াই হবে জলের জন্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy