দল বদলের ঘন আবহে তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা এবং পদাধিকারী রয়েছেন যাঁদের অনুযোগ, দল তাঁদের প্রাধান্যই দিতে চাইছে না।
লোকসভা নির্বাচনের পরে জেলা কমিটির নেতাদের একটা বৃহত্তর অংশের দাবি, বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পাননি তাঁরা। ফলে গোসা করে তাঁদের অনেকেই বসে রয়েছেন বাড়িতে। দলের মিটিং-মিছিলে যেমন পা বাড়াননি তেমনই দলের কোনও বৈঠকে মুখ দেখাননি।
তাঁদেরই এক জন কোনও রাখঢাক না রেখে বলছেন, ‘‘আমাদের অনুমান ছিল, নির্বাচনে কংগ্রেস ভাল ফল করবে। তা হলে আমরা কোনও দ্বিধা না করেই পুরনো দলে ফিরতাম। কিন্তু বিজেপি’র রমরমা দেখেএখন দোটানায়।’’
কান্দি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে কোনও ‘পাত্তা’ না পাওয়া এক নেতা নির্বাচন পর্বে বসে ছিলেন বাড়িতেই। তাঁর অনুগামীদেরও সভা সমিতিতে দেখা যায়নি। এখন ‘যোগ্য সম্মান’ না পাওয়ায় সরব হয়ে তাঁরা পা বাড়িয়েছেন বিজেপির দিকে। কোনও আড়াল না রেখেই তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘অনেক হল আর নয়, আমাদেরও মানসম্মান বলে কিছু আছে। রাজনীতি করি তো, তাই যেখানে যোগ্য সম্মান পাব সেখানেই যাব।”
খড়গ্রাম ব্লক তৃণমূলের সহকারী সভাপতি তথা গত পঞ্চায়েত সমিতি বোর্ডের বিরোধী দলনেতা প্রকাশ রাজবংশী বলেন, “পাঁচ বছর তৃণমূলের সঙ্গে আছি, কিন্তু যোগ্য সম্মান কোনও দিনই পাইনি। এ বার তাই বিজেপিতে যোগ দেব।” প্রকাশের কথায় সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে জুনের শেষে বিজেপিতে অনুগামীদের নিয়ে যোগ দেবেন তিনি। প্রকাশ বলেন, “দলের নীতি বলে কিছু আছে না কি! দলের সব কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পাওয়া যায়না, শুধু শতকরার হিসাব বুঝতে পারলেই দল করা যাবে, এটা আমি পারব না।”
একই ভাবে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কান্দি ব্লকের বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় ঘোষ এ বার লোকসভা ভোটের প্রচার থেকে সভায় কোথাও আমন্ত্রণ পাননি। তাই তাঁর কর্মী ও অনুগামীরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য জেদাজেদি শুরু করেছেন বলে দাবি করেন ধনঞ্জয়। বলেন, “কর্মীরা রোজই বলছে। আমি এখনই কিছু ঠিক করিনি। তবে অন্য কোথাও না গিয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতেও পারি।’’
প্রায় একই অভিমানের সুর আজিজুল মণ্ডলের গলাতেও। জলঙ্গি এলাকার কার্যকরী সভাপতি ও প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য বলেন, ‘‘আমি গত জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্য ছিলাম। বর্তমানে জলঙ্গি উত্তর জোনের কার্যকরী সভাপতি। কিন্তু দির্ঘ দিন ধরে দলের সভাপতি তহিরুউদ্দিন সেখের বিরুদ্ধে কাট মানি, পাচার ও তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছি, কাজ হয়নি। দুর্নীতির ভাগ নেব না, বাধ্য হয়েই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’’ যা শুনে মৃদু হাসছেন বিজেপির জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ। বলছেন, ‘‘দেখুন না কী হয়!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।