বছর চারেক আগে চালু হয়েছিল জেলার একমাত্র সাওতাল মাধ্যমের একটি স্কুল। এরই মধ্যে স্কুলটি ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। কল্যাণীর ওই স্কুলটি নবম-দশম শ্রেণির পঠন-পাঠনের জন্য এখনও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদন পায়নি। ফলে নবম শ্রেণির ৪১ জন পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) বিষয়টি একাধিক বার লিখিত ভাবে জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হয়েছেন।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মিতালি দত্তের দাবি, “স্কুলটির অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর অনুমোদন রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের জন্য অনুমোদন চেয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে আবেদনপত্র পাঠিয়েছি।’’ কবে মিলবে অনুমোদন? এ প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি মিতালি।
২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি কল্যাণীর পাঁচ-এর পল্লিতে আবাসিক সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল ‘বীর সিধু কানু নগর জুনিয়র স্কুল’—এর অনুমোদন মেলে। ১৮ জানুয়ারি জেলা সফরে এসে স্কুলটি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সরকার স্কুলটিতে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ করেন। নদিয়া তো বটেও দক্ষিণবঙ্গের আরও কয়েকটি জেলার পড়ুয়ারা ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। পড়ুয়াদের সিংহভাগই আবাসিক।
পঞ্চম শ্রেণির ওই পড়ুয়ারা এ বছর অষ্টম শ্রেণির পাঠ শেষ করেছে। কিন্তু নবম শ্রেণিতে উঠেই অথই জলে পড়েছে তারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ৪১ জন পড়ুয়ার এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ। মাধ্যমিকের অনুমোদন না মেলায় পড়ুয়ারা পর্ষদ-প্রকাশিত বই পাচ্ছে না। পঠন-পাঠন থমকে রয়েছে। ভবিষ্যতে তারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা। আশপাশে সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলও নেই। ফলে পড়ুয়ারা অন্য স্কুলে ভর্তিও হতে পারছে না।
জট কাটাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের দোরে দোরে দৌঁড়ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বুলান মুর্মু জানান, দু’দিন আগেও তিনি জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু সদর্থক বার্তা পাননি। বিদ্যালয় পরির্শক কেবলই জানাচ্ছেন, কাগজপত্র পর্ষদে পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থাতে বইও মিলছে না। মিতালিও বলছেন, ‘‘অনুমোদন না পেলে বই দেওয়া যাবে না।’’
এই অবস্থায় মঙ্গলবার স্কুলের পরিচালন সমিতির (অস্থায়ী) সদস্য রাইমণি মুর্মু ও সহ-শিক্ষক পাঁচুগোপাল হেমব্রম মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান। তবে তাঁর দেখা পাননি। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে থাকা আধিকারিকেরা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনার আশ্বাস দিয়েছেন।
এই টালমাটালের মধ্যে বেজায় চিন্তায় পড়েছেন বাঁকুড়ার রাইপুরের ফুলকুসমার বর্ণালি কিস্কু। সে এ বার অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছে। বর্ণালির কথায়, “জানুয়ারি থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু ভর্তিই হতে পারলাম না। স্কুলে বই আসেনি। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy