এমনিতেই উৎসশ্রী প্রকল্পে সীমান্তের প্রান্তিক এলাকার স্কুলগুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছিল। তার পর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরি যাওয়াই রীতিমত হাহাকার দেখা দিয়েছে সীমান্ত জুড়ে। ওই স্কুলগুলির শিক্ষকরা কী করবেন এই পরিস্থিতিতে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, বর্তমানে প্রথম পার্বিক পরীক্ষা চলছে, সেই পরীক্ষা কোনও ক্রমে সামাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ক্লাস শুরু হলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। এমন অনেক স্কুল আছে যেখানে এক একটা বিভাগের এক জনও শিক্ষক নেই। ফলে নতুন করে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে বলে দাবি তাঁদের। এই ঘটনার ফলে একদিকে যেমন স্কুল কর্তৃপক্ষের মাথায় বাজ পড়েছে, তেমনই ভাবে কপালে ভাঁজ পড়েছে মুর্শিদাবাদের সীমান্তের প্রান্তিক এলাকার অভিভাবকদের। কারণ এই এলাকার হাজার হাজার পড়ুয়া কেবল স্কুলের পঠন পাঠনের ওপর নির্ভর করেই লেখাপড়া চালিয়ে যান।
মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইনডোরে চাকরিহারা শিক্ষকদের আবেদন জানিয়েছিলেন স্কুলে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য। কিন্তু সীমান্তের স্কুলগুলিতে এ দিনও লক্ষ্য করা গিয়েছে তাঁর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কেউ স্কুলে আসেননি। ইসলামপুর থানার একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা লোচনপুর নিত্যকালী হাই স্কুলে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এত দিন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ছিলেন ৩৯ জন শিক্ষক। কিন্তু ১৮ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন ওই স্কুল থেকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলছেন, ‘‘পরীক্ষার শেষে পঠন-পাঠন শুরু হলে কিভাবে স্কুল চালাবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানানোর পরেও কোন চাকরিহারা শিক্ষক স্কুলে আসেননি। আর এই ধারা যদি বজায় থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে চরম এক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে আমাদের।’’ সাগরপাড়া গার্লস স্কুলে ২৬ জন শিক্ষিকার মধ্যে ১৪ জনই চাকরি হারিয়েছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শান্তা দে বলেন, ‘‘কিভাবে স্কুল চলবে সেটা ভেবেই আতঙ্কের প্রহার গুনছি। রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারছি না ওই চিন্তায়।’’ ডোমকলের মধুরকুল হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অমিতাভও কর্মকার বলছেন, ‘‘১৬ জন শিক্ষককে নিয়ে ২২০০ বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াতে হবে আমাদের।"
লোচনপুর এলাকার এক অভিভাবক কালাম মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকার বড় একটা অংশের পড়ুয়ারা নির্ভর করে স্কুলের উপরে। আলাদা করে গৃহশিক্ষক রেখে লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়। আর্থিক ভাবে সচ্ছলরা বেসরকারি স্কুলে ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছেন সন্তানদের। আমাদের সন্তানদের এবার কী হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)