Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়

রাসের বাজিতে রাশ, কড়া নজরদারিতে নিয়ন্ত্রণে শব্দবাজি

যদিও কোজাগরীর রাত শব্দহীন থাকাই বিধান। শাস্ত্রে রয়েছে, তাতে চঞ্চলা লক্ষ্মীর কৃপা মেলে।

নিয়ন্ত্রণ: রাসের পাটপুজো নবদ্বীপে। এই পুজো উপলক্ষেই কোজাগরীর রাতে দেদার শব্দবাজি ফাটে। —নিজস্ব চিত্র

নিয়ন্ত্রণ: রাসের পাটপুজো নবদ্বীপে। এই পুজো উপলক্ষেই কোজাগরীর রাতে দেদার শব্দবাজি ফাটে। —নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

এমন ‘কানের আরাম’ ভরা কোজাগরী নিশি নবদ্বীপে আগে কখনও আসেনি!

সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত শব্দবাজির দমকে কেঁপে উঠছে না দক্ষিণে প্রফুল্লনগর থেকে উত্তরে প্রাচীন মায়াপুর। কান চেপে হাঁটতে হচ্ছে না শব্দে অতিষ্ঠ পথচারিকে। নারায়ণ শিলা হাতে পুরোহিতমশাইকে শব্দবাজির বাড়াবাড়িতে তপ্ত বড় রাস্তা এড়িয়ে গলিঘুঁজি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে না। চমকে উঠতে হচ্ছে না অসুস্থ মানুষকে। পাড়ার নেড়ি লেজ গুটিয়ে লুকোনোর জায়গা খোঁজার বদলে যেন অনেকটা স্বস্তিতে। কোজাগরীর রাতে নবদ্বীপে শব্দবাজিময় পরিচিত ছবি এ বার উধাও। কারণ, পুলিশ ও প্রশাসনের আগাম সক্রিয়তা।

যদিও কোজাগরীর রাত শব্দহীন থাকাই বিধান। শাস্ত্রে রয়েছে, তাতে চঞ্চলা লক্ষ্মীর কৃপা মেলে। কিন্তু নবদ্বীপে এত দিন ছিল উল্টো নিয়ম। কোজাগরীর রাত শব্দবাজির পিলে চমকানো বিকট আওয়াজে শহর কেঁপে-কেঁপে উঠত। কারণ, নবদ্বীপের অন্যতম প্রধান উৎসব রাসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় কোজাগরীর রাতে। স্থানীয় ভাবে যা ‘পাটপুজো’ নামে পরিচিত।

রাসের প্রতিমা নির্মাণের কাঠের কাঠামোয় শালগ্রাম শিলা ছুঁইয়ে হয় ‘পাট পুজো।’ পরের একটা মাস ধরে ওই পাটের উপরেই তৈরি হবে আকাশছোঁয়া সব প্রতিমা। শহরের প্রায় তিনশো রাস বারোয়ারির তরফে বাজি ফাটিয়ে পালন করা হয় পাটপুজো। তাতেই ত্রাহি মধুসূদন দশা হয় শহরবাসীর। প্রকাশ্য রাস্তায় শব্দবাজি ছুড়ে চলে উদ্দাম উল্লাস। এই প্রথম দেখা গেল তার ব্যতিক্রম।

রবিবার সকাল থেকেই মাইক প্রচার শুরু করে পুলিশ। সন্ধ্যায় শহর জুড়ে সাদা পোশাকের পুলিশ এবং হাফ ডজনেরও বেশি টহলদারি গাড়ির চক্কর দেয়, শব্দবাজি ফাটালেই ধরপাকড় শুরু হয়। তাতেই উৎসাহ ও শব্দ দুই স্তিমিত হয়। যেখানে অন্যবার মধ্যরাত পর্যন্ত অনর্গল বাজি ফাটে সেখানে এ বার রাত দশটার পর থেকেই বাজির দাপট নিস্তেজ হয়ে যায়। এগারোটার মধ্যে কার্যত গোটা শহর শান্ত। খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই প্রথম কোজাগরী রাতে রাসের শব্দবাজি ঠেকাতে কঠোর মনোভাব নিল পুলিশ। রবিবার দুপুরের পর থেকে শহরের নানা প্রান্তে টোটোয় মাইক বেঁধে শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। ঘোষণা করা হয়— শব্দবাজি ফাটানো আইনত দণ্ডনীয়। সন্ধ্যা নামতেই পথে নামে সাদা পোশাকের পুলিশ। বিভিন্ন পুজো কমিটিকে তারা শব্দবাজি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। দুটি ভ্যান এবং পাঁচটি বাইকে পুলিশ শহর জুড়ে টহল দেয়। শব্দবাজি ধরতে বেরিয়েছিলেন খোদ নবদ্বীপের আইসি কল্লোল কুমার ঘোষ। বেআইনি শব্দবাজি বিক্রির করার অভিযোগে দু’ জনকে ধরাও হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় বেশ কিছু শব্দবাজি। পড়ে ধৃতদের ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

কল্লোলবাবুর কথায়, “উৎসব আনন্দের জন্য। কিন্তু তা যদি বেশির ভাগ মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে তা হলে তার সার্থকতা কোথায়?’’ তাঁর কথায়, ‘‘ আমার আগাম ঠিক করেছিলাম, কথা না-শুনলে বাজি ফাটানোর ছবি ভিডিও করা হবে এবং সেই ভিডিও দেখে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কোথায় বেআইনি শব্দবাজি বিক্রি হচ্ছে তা খুঁজতে শহর জুড়ে টহল দেবে পুলিশ। সেই মতো কাজ হয়েছে। ফলে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।” নবদ্বীপের পুলিশ সুুপার জাফর আজমল কিদওয়াই বলেন, ‘‘আমরা নবদ্বীপের মানুষের কাছেও কৃতজ্ঞ। তাঁদের শব্দবাজি ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁরা তাতে সাড়া দিয়েছেন।’’ আর নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য—‘‘ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kojagari Lakshmi Puja Noise Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy