মা লতিকা মণ্ডল এবং ছেলে সৌরভ, দু’জনে এ বার একসঙ্গে কলেজে পড়বেন। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকে টেনশনে মা-ছেলে। রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা। ফলঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ক্লিক করেছিলেন। রোল নম্বর দিতে ভেসে উঠল প্রাপ্ত নম্বর ২৮৪। মিনিটের ব্যবধানে আরও একটি রোল নম্বর ক্লিক করা হল। দেখা গেল ৩২৪। পরীক্ষায় কৃতকার্য দু’জনেই। সম্পর্কে তাঁরা মা-ছেলে। এ বার একসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
কিন্তু ভাল ফল করেও মন ভাল নেই নদিয়ার শান্তিপুর থানার নতুন সর্দারপাড়ার বাসিন্দা লতিকা মণ্ডলের। কারণ, ছেলের থেকে তিনি যে ৪০ নম্বর বেশি পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফলটা উল্টো হলে খুশি হতাম।’’ তবে মা এবং নিজের পরীক্ষার ফল নিয়ে সৌরভ বলেন, ‘‘হেরেও আমিই জিতেছি।’’ আসলে তাঁর ইচ্ছেতেই হাতা-খুন্তি কিছু ক্ষণের জন্য রেখে খাতা-পেন তুলে নিয়েছিলেন ৩৮ বছরের লতিকা। শান্তিপুরে মা এবং ছেলের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল দেখে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা।
ধুবুলিয়ার বাসিন্দা লতিকার সঙ্গে শান্তিপুরের নৃসিংহপুরের অসীম মণ্ডলের বিয়ে হয় প্রায় ২০ বছর আগে। বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অনটনের মধ্যে লতিকার পড়াশোনা আর বেশি দূর হয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই স্কুলছুট। কিছু দিন পর বিয়ে এবং সংসার। স্বামী দিনমজুর। অনটন এখনও আছে। কিন্তু সংসার সামলে ছেলেমেয়েকে বড় করার মধ্যেও লতিকাকে বার বার টানত বই। তাঁর ইচ্ছে শুনে প্রথমে রাস্তা বাতলে গিয়েছিলেন এক প্রতিবেশী। মাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন ছেলে। এর পর আর দেরি না করে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যান লতিকা। ২০২০ সালে মাধ্যমিক দেন। ফলও হয়েছিল ভালই। তত দিনে মেয়ে স্কুলের গণ্ডি পার করে কলেজের পথে। ছেলে তার পরের বছরই পাশ করেছে মাধ্যমিক। ২০২১ সালে নৃসিংহপুর হাই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে ভর্তি হন লতিকা। আর ছেলে সৌরভ ভর্তি হন পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহারাজা হাই স্কুলে। এবার একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন মা এবং ছেলে। এবং দু’জনেই মোটামুটি ভাল ফল করেছেন।
লতিকা জানান, এ বার এডুকেশনে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে চান। তবে তাঁর আক্ষেপও আছে। বলেন, ‘‘রেজাল্ট উল্টো হলে ভাল হত। ছেলেটা আর একটু ভাল ফল করলে ভবিষ্যতে কাজে দিত। আমার এই বয়সে রেজাল্ট দিয়ে আর কী হবে!’’ তবে ছেলে যেন হেরে গিয়েও জিতে যাওয়া ‘বাজিগর’। তাঁর কথায়, ‘‘সবাই বলছে তোর মা এত ভাল ফল করেছে। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। আমিই তো জিতেছি!’’ সৌরভ জানান, কলেজে পড়তে পড়তে সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবেন।
সংসার চালাতে স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিনান্ত পরিশ্রম করতে হয় লতিকাকে। গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি তাঁত বোনার কাজ করেন। সেই কাজের ফাঁকেই পড়াশোনা করতেন। কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। কখনও মেয়ে, কখনও প্রতিবেশী এক তরুণী তাঁকে পড়াশোনায় সাহায্য করতেন। সাহায্য পেয়েছেন নৃসিংহপুর হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy