Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

টেবিলে পড়ল স্কুলের পাত

বছর দুয়েক আগেও স্কুলের উঠোনে সার বেঁধে বসে মিড-ডে মিল খেত কচিকাঁচারা। আশপাশে ঘুরে বেড়াত কুকুর-বিড়াল। সেই ছবি আনন্দবাজারে (২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর) ছাপা হওয়ায় তৎকালীন জেলাশাসক শো-কজ করেছিলেন প্রধান শিক্ষককে। ছবিটা শেষ পর্যন্ত পাল্টেই গেল।

উত্তরণ: খোলা উঠোনের বদলে টাইলস পাতা ডাইনিং হলে নতুন চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ুয়ারা খেল মিড-ডে মিল। নাকাশিপাড়ার ধর্মদা প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।

উত্তরণ: খোলা উঠোনের বদলে টাইলস পাতা ডাইনিং হলে নতুন চেয়ার-টেবিলে বসে পড়ুয়ারা খেল মিড-ডে মিল। নাকাশিপাড়ার ধর্মদা প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৭
Share: Save:

বছর দুয়েক আগেও স্কুলের উঠোনে সার বেঁধে বসে মিড-ডে মিল খেত কচিকাঁচারা। আশপাশে ঘুরে বেড়াত কুকুর-বিড়াল।

সেই ছবি আনন্দবাজারে (২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর) ছাপা হওয়ায় তৎকালীন জেলাশাসক শো-কজ করেছিলেন প্রধান শিক্ষককে। ছবিটা শেষ পর্যন্ত পাল্টেই গেল।

টাইলস বসানো খাবার ঘরে নতুন চেয়ার-টেবিলে বিছিয়ে মিড-ডে মিল দেওয়া শুরু হল নাকাশিপাড়ার ধর্মদা প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে (‌কো-এড)। সরকার-পোষিত স্কুলে যার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

শুধু কি খাবার ঘর? সভাকক্ষ থেকে শুরু করে শৌচাগার, মেঝে মুড়ে ফেলা হয়েছে টাইলসে। পানীয় জলের জন্য বসেছে পরিশোধন যন্ত্র। মাত্র দু’বছরের মধ্যে। ১৯৫৪ সালে চালু হওয়া ওই স্কুলে ক্লাসঘরের অভাব ছিল। শৌচাগারের টানাটানি, হাত ধোওয়ার জায়গা নিয়ে পর্যন্ত সমস্যা ছিল। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সচ্চিদানন্দ বন্দোপাধ্যায় বলছেন, “গ্রামের একটা স্কুলে পরিকাঠামোর যে উন্নতি হয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।”

কী করে এমনটা হল? শো-কজ হওয়ার পরেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীবাসচন্দ্র দাস জেলাশাসক ও প্রশাসনের অন্য কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। ২০১৪ সালেই প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অনুমতি নিয়ে পুরোনো স্কুলবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। নতুন করে কেনা হয় তিন শতক জমি। সব মিলিয়ে মোট সাত শতক জমিতে শুরু হয় নতুন বাড়ি তৈরি। ২০১৫ সালের শেষ দিক ঘরে বসিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিডডেমিল খাওয়ানো শুরু হয়।

অতীত। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর আনন্দবাজারে ছাপা হয়েছিল উঠোনে বসিয়ে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ানোর এই ছবি। ফাইল চিত্র

দোতলা স্কুলে পাঁচটি ক্লাসঘরে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যম্ত মোট ৪৫৫ জন ছাত্রছাত্রী। পড়াশোনা নিয়ে খুশি অভিভাবকেরা। ধর্মদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামসুন্দর দে-ও তাঁর ছেলে দেবানিককে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। তাঁর কথায়, “অনেকেই ছেলেমেয়েকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেন। কিন্তু এখানে পড়াশোনা ভাল হওয়ায় আমি ছেলেকে অন্য কোথাও পাঠাইনি।’’ সোনালি প্রামাণিক বা সুতন্দ্রা প্রামাণিকের মতো সাধারণ অভিভাবকেরাও একই কথা বলছেন।

ডাইনিং টেবিল-চেয়ার কেনার টাকা কী ভাবে জোগাড় হল?

প্রধান শিক্ষক জানান, উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে আসা টাকা থেকে ৪৭ হাজার টাকা বেঁচেছিল। তা দিয়ে ১০১টি চেয়ার আর ২৪টি টেবিল কেনা হয়েছে। একেবারে খুদেরা কি চেয়ারে বসে টেবিলে থালার নাগাল পাবে? তারা খাবে কী করে? শ্রীবাস জানান, যারা চেয়ার-টেবিলে বসে খেতে পারবে না, তাদের সাফসুতরো টাইলসের মেঝেয় বসিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে নতুন করে পথ চলা। অন্যেরাও অনুসরণ করবে কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Midday Meal School Table Chair Nakashipara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE