১১ বছরের বালিকা ত্রস্ত গলায় বাবাকে ফোন করেছিল—‘‘এক্ষুনি এসো, মা কী রকম করছে, মনে হয় আমাকে মেরে ফেলবে!’’
লটারির টিকিট বিক্রেতা বাবা অমরেশ রাহা দোকান বন্ধ করে ছুটতে-ছুটতে বাড়ি ফিরেছিলেন। ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। মেয়ের নাম ধরে অনেক ডাকাডাকির পরেও সাড়া না-পেয়ে প্রতিবেশীদের সাহায্যে দরজা ভেঙে দেখেন, রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছে। আর হাঁসুয়া হাতে থম মেরে বসে স্ত্রী রাধারানি। সামনে মেয়ে অনসূয়া-র ক্ষতবিক্ষত দেহ। হাঁসুয়া দিয়েই মেয়ের দেহ কুপিয়ে-কুপিয়ে কেটেছেন রাধারানি। দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারান অমরেশ। সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে মুর্শিদাবার থানার প্রসাদপুর পঞ্চায়েতের শ্যামাপ্রসাদ পল্লিতে।
বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক রোগে ভুগছিলেন রাধারানি। লালবাগ মহকুমা পুলিশ অফিসার বরুণ বৈদ্য জানান, একমাত্র সন্তানকে খুন করার পর রাধারানি নিজের মাথায় হাঁসুয়ার কোপ মেরে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোপ ঠিকমতো মাথায় লাগেনি। তখন তিনি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। পড়শিরা কোনওক্রমে তা আটকান। রাধারানিকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাঁকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁর মাথায় ৮টি সেলাই পড়েছে।
অমরেশবাবু জানিয়েছেন, প্রায় ১৩ বছর আগে প্রথম সন্তান হওয়ার সময়ে রাধারানির ‘পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস’-হয়েছিল। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনরোগ বিভাগের প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, সন্তানের জন্মের পর অনেক মায়ের এই মানসিক রোগ হয়। অনেকে সদ্যোজাতকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। শারীরিক অসুস্থতায় রাধারানির প্রথম সন্তান বাঁচেনি। তবে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। বছর দু’য়েক পর অনসূয়া জন্মায়। তখন রাধারানি ভালই ছিলেন। মেয়েকে ভালবাসতেন। কিন্তু হঠাৎ এত বছর পর সাইকোসিস ফিরে আসে। মনঃচিকিৎসক সুজিত সরখেলের কথায়, ‘‘যাঁদের পোস্ট পার্টাম সাইকোসিসের অতীত ইতিহাস থাকে তাঁদের পরে সাইকোসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ সেই মনোরোগই একমাত্র সন্তানের জীবন কেড়ে নিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy