Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্যকর্মীর হাত ধরে ঘরে রিপন

দিন কয়েক আগে, ডোমকল হাসপাতালের চিকিৎসকদের মানবিক মুখ দেখে মুগ্ধ হয়েছিল প্রান্ত গাঁয়ের মানুষ। রবিবার, সেই হাসপাতালেরই  এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক আর মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর আন্তরিক মন উদ্ধার করে আনল হারানো এক মানুষকে।

বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে রিপন মণ্ডল। রানিনগরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে রিপন মণ্ডল। রানিনগরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩১
Share: Save:

দিন কয়েক আগে, ডোমকল হাসপাতালের চিকিৎসকদের মানবিক মুখ দেখে মুগ্ধ হয়েছিল প্রান্ত গাঁয়ের মানুষ। রবিবার, সেই হাসপাতালেরই এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক আর মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর আন্তরিক মন উদ্ধার করে আনল হারানো এক মানুষকে।

বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। এ দিন এক প্রসূতিকে গ্রামে ছেড়ে ফেরার পথে এলোমেলো ঘুরতে দেখা সেই ছেলেটিকে দেখতে পেয়েই গাড়ি থামাতে বলেন দীপালি খাতুন, ‘‘দাঁড়াও দেখি, এ তো আমাদের রিপন গো!’’

বছর কুড়ির ছেলেটিকে তুলে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে দীপালি বলছেন, ‘‘এ আর এমন কী মহৎ কাজ শুনি, মানুষটা হারিয়ে গিয়েছে, তাঁকে খুঁজে পেলে ফিরিয়ে আনব না!’’

বছর কুড়ির রিপন মণ্ডল বছর কয়েক ধরেই অসুস্থ। মাঝে মাঝেই তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান। পাড়া পড়শিই তাঁকে ধরে এনে বাড়িতে ফেরান। কিন্তু গত তিন দিন ধরে তিনি বেমালুম হারিয়ে গিয়েছিলেন।

বুধবার ওই যুবক নিখোঁজ হওয়ার পরে পরিবার নানা ভাবে চালিয়েছিল প্রচার। কখনও মারুতি ভ্যানে মাইক বেঁধে, আবার কখনও ছবি-সহ পোস্টার নিয়ে, লিফলেট ছাপিয়ে জেলা জুড়ে ছড়িয়ে। কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে গেলেও রিপনের খোঁজ মেলেনি।

দীপালি রানিনগরের বাসিন্দা। সেই প্রচার-পোস্টার ছবি নজরে এসেছিল তাঁরও। লালগোলায় রোগী নামিয়ে রাজ্য সড়ক ধরে ফেরার পথেই দীপালির নজর পড়ে ওই যুবকের দিকে। আর তার পরেই চালক ও দীপালী ওই যুবককে গাড়িতে তুলে পরিবারের হাতে তুলে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ি ওই এলাকায়। ফলে ঘটনার পর থেকে প্রচার শুনছিলাম মাইকে। পোস্টারে ছবিও দেখেছিলাম রিপনের, ফলে আমাইপাড়ায় রাস্তার পাশে ছেলেটাকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ি। ফোন নম্বর জোগাড় করে পরিবারকে জানালাম, তার পরে নামিয়ে দিলাম তাঁর বাড়িতে।’’

ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘অমরা গাড়িতে তুলতে গেলেও তিনি প্রথমে রাজি ছিলেন না। অনেক কষ্টে তাঁকে গাড়িতে তুলে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে খেতে দিয়ে সোজা গাড়ি চালিয়ে দিই। সটান এসে নামাই তাঁর বাড়িতে।’’

রিপনের মা সাজু বিবির ধড়ে প্রাণ ফিরেছে। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার রাত থেকে মুখে খাবার তুলতে পারিনি। দিনরাত এক করে গোটা পরিবার ওর খোঁজে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরছিল। থানায় জানানো হয়েছিল। এ ভাবে ছেলেকে ফিরে পাব ভাবতেও পারিনি। মানুষ এখন মানুষের জন্যে আছে বলেই ছেলেকে ফিরে পেলাম।’’

ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডিও। বলছেন, ‘‘আমরা সকলেই একটু করে মানুষের পাশে দাঁড়ালেই সমাজের চেহারাটা বদলে যাবে। দীপালি ও সাজিদুলকে ধন্যবাদ। হাসপাতালের মুখ ঝলমলে করে দিলেন ওঁরা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mental patient Domkal ডোমকল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE