গুজবের জেরে গণপিটুনি চলছিলই। ছেলেধরা সন্দেহে একে-তাকে ধরে বেধড়ক মারধরের ফলে গুরুতর জখম হয়ে ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি জনা সাতেক। তার চূড়ান্ত পরিণতি সোমবার দেখল মুর্শিদাবাদের মধুপুর।
মানসিক ভাররসাম্যাহীন এক যুবককে পিটিয়ে মেরেই ক্ষান্ত হল না জনতা। পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হল তার মুখ। তদন্তে নেমে ওই এলাকা থেকে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। গুজবের গ্রাসে যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামের মসজিদ থেকেও শুরু হয়েছে প্রচার—গুজবে কান দেবেন না। তবে গ্রামবাসীদের কথায়, ‘একবার গুজব রটলে তাকে ঠেকানো বড় মুশকিল’।
ছেলেধরা গুজবের এই হাওয়া মুর্শিদাবাদে অবশ্য অচেনা নয়। গ্রামগুলি থেকে কোনও ছেলেপুলের নিখোঁজ হওয়ার খবর না থাকলেও গত কয়েক বছরে, কখনও ডোমকল কখনও বা লালগোলা কিংবা রানিনগরে এমন গুজবে গণপিটুনির ঘটনা কম ঘটেনি। প্রহৃতকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের মার খাওয়ার নজিরও রয়েছে জলঙ্গিতে। বছর কয়েক আগে ডোমকলে গণপিটুনির জেরে মৃত্যুর ঘটনাও নতুন নয়। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল সুতির মধুপুর। গত দু’দিন ধরে সুতি, সমশেরগঞ্জ থানা এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে অন্তত ৭ জনকে ধরে মারধর করেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন এখনও হাসপাতালে।
এ দিন, অরঙ্গাবাদ রাজ্য সড়ক ধরে সাজুর মোড়ের দিকে যাচ্ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন বছর পঁচিশের ওই যুবক। মাঠে ফুটবল খেলছিল এক দল কিশোর। তাদের খেলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিল ছেলেটি। এমনই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এই সময় ওই যুবককে ঘিরে ধরে জেরা শুরু করে কয়েক জন যুবক। ওই ভবঘুরে ছেলেটির এলোমেলো উত্তর শুনে তাকে ছেলেধরা ‘সাব্যস্ত’ করে শুরু হয় চড়-থাপ্পড়। ক্রমে তা বদলে যায় কিল-চড়-ঘুষিতে। এক সময়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে পেটাতে থাকে ওই যুবকেরা। বেরিয়ে পড়ে বাঁশ, লাঠি। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘চোখের সামনে এক জন বাঁশ দিয়ে মাথায় মারল ছেলেটির। মাটিতে পড়ে যেতেই অন্য এক জন রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে তার মুখ থেঁতলে দিল।’’
প্রায় মিনিট চল্লিশ ধরে এই ‘শাস্তি’র পরে যুবককে রাস্তার পাশে ফেলে ফিরে যায় ওই যুবকেরা।
খবর পেয়ে আসে স্থানীয় থানার পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করে আটক করা হয় তিন জনকে। এর পরে বিকেলেই পুলিশের জিপে মাইক নিয়ে শুরু হয় গুজবে কান না দেওয়ার প্রচার। সুতি এবং অরঙ্গাবাদ এলাকার বেশ কয়েকটি মসজিদ থেকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য প্রচারও শুরু হয়েছে।
মধুপুর গ্রামের কাছেই রাস্তার উপরে শ্যামল পালের চায়ের দোকান। তিনি জানান, এলাকায় ছেলেটিকে প্রায়ই দেখা যেত। ক’দিন আগে তাঁর দোকানে এসে চাও খেয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন হঠাৎ শুনি ছেলেধরা ধরা পড়েছে। গিয়ে দেখি ভবঘুরে ছেলেটার দেহ পড়ে রয়েছে।’’ সুতি-২ বিডিও দীপঙ্কর রায় জানান, ছেলেধরার গুজব ঠেকাতে বিকেল থেকেই প্রচার শুরু হয়েছে। এলাকার ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক মহম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গুজব সাংঘাতিক। বেঘোরে প্রাণ গেল ছেলেটির।’’ রটনা রুখতে এ দিন তাই এগিয়ে এসেছেন তাঁরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy