Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

‘গালিব’ বাঁধা রেখে ফিরছেন শমসের

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪৪
Share: Save:

ঝকঝক ইস্পাতে রোদ পড়লে ঠিকরে যায়। ছেলের নামে নাম ‘উজান’। যত বার মইনুদ্দিন মোটরবাইকটায় উঠে স্টার্ট দিতেন, প্রতি বার মনে পড়ত মুম্বইয়ের দিনগুলো। সতেরো তলার উপরে উঠে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়। রাতে ফিরতে হত দশ জনের ঘরে। রুটি খেতে খেতে মনে পড়ত উজানে উজানকে তুলে রানিতলার পদ্মাপাড়ে যাওয়ার কথা।

সেই বাইক মইনুদ্দিন বন্ধক রেখেছিলেন লকডাউনে ঘরে ফিরে সংসার চালানোর জন্য। তা আর ছাড়াতে পারেননি। মইনুদ্দিন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘উজানের মুখে ভাতটা তুলে দিতে হবে। ইদ গিয়েছে এর মধ্যে। হাতে টাকা ছিল না। কী করব?’’ যে টাকা ধার করেছিলেন বাইক বন্ধক রেখে, তা সুদে-আসলে এখন যা দাঁড়িয়েছে, ফের কবে উজান হাতে পাবেন, জানেন না মইনুদ্দিন।

একই কথা শামসের আলির। কবিতার ভক্ত শামসের বাইকের নাম রেখেছিলেন গালিব। গালিব বাঁধা পড়ে রয়েছে বন্ধকে। বলছেন, ‘‘কান্না পায় জানেন। বড় প্রিয় ছিল বাইকটা। বন্ধ রেখে ফেরার ভাড়া কাটলাম।’’

ডোমকলের অলিতে গলিতে এমন অনেক বাড়ির সন্ধান এখন মেলে, যে বাড়িতে মাত্র ক’মাস আগেও তিনটি বাইক ছিল, সেখানে উঠোন এখন ফাঁকা। কারও সিঁড়ির পাশে থাকত দু’টো বাইক। সেখানটায় নোংরা জমেছে।

এলাকার আতিকুর রহমান বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই রোজগার করতে শুরু করে প্রথমেই বাইক কেনে। এখন রোজগার বন্ধ। সব থেকে সহজ কাজ হল বাইক বাঁধা রেখে ধার করা।’’ এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক একটা বাইকের দাম সত্তর হাজার থেকে এক লাখ টাকা। বন্ধক রেখে মেলে ত্রিশ, চল্লিশ হাজার। রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মিনা বিবির বক্তব্য, ‘‘বাইক বন্ধক রেখে এমন লেনদেন বেআইনি। কিন্তু যাঁরা করছেন, তাঁরা খুবই বিপদে পড়ে করছেন, তা বুঝতেই পারছি।’’ ডোমকলের এক পরিযায়ী শ্রমিক সেলিম রেজা বলেছেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে কাজ করে টিভি কিনেছি, সাউন্ড সিস্টেম কিনেছি। সে সব তো আর বাঁধা দেওয়া যায় না। তাই বড় প্রিয় বাইকটাই বাঁধা রেখে সেই টাকায় ফেরার ভাড়া দিয়েছি। আশা করি, বাইকটা এক দিন ছাড়াতে পারব।’’

কেউ কেউ বিক্রি করেও দিচ্ছেন। রায়পুর এলাকার এক মোটরবাইকের ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘গ্রামের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক টাকার অভাবে বন্ধক রেখেছে আমার কাছে মোটরবাইক। গোটা ১৫ বাইক জমা হয়েছে আমার কাছে, এর মধ্যে ১০ জনই বলেছে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়ার জন্য।’’

একটি বাইক শোরুমের মালিক আফাজউদ্দিন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘নতুন মোটরবাইক কেনার চাহিদা এখন আর মানুষের নেই, বরং পুরনো বাইক কেউ কেউ বিক্রি করছেন। কম দামে বিক্রি হচ্ছে।’’

মইনুদ্দিনের ছেলে উজান কিন্তু অপেক্ষায় রয়েছে, আবার কবে তার বাবার বাইক ঘরে ফিরবে। বাতাসে তুফান তুলে ছুটবে বাপ-ছেলে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy