রামচন্দ্র গোস্বামী রোড। শান্তিপুরে তিন নম্বর গেট। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার একটা অংশের দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছিলেন শান্তিপুর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি সুভাষপল্লির বাসিন্দা নৃপেন রায়— “দেখুন এই রাস্তার তলা দিয়েই জলের পাইপলাইন গিয়েছে। কিন্তু যেহেতু বাড়ির জমি আমাদের নামে নয় তাই এখনও জলের লাইন আমাদের কারও বাড়ি পৌঁছয়নি।” শুধু তিনিই নন এলাকার অন্য বাসিন্দারাও দীর্ঘদিন মনে এই ক্ষোভ পুষে রেখেছেন।
সুভাষপল্লি গড়ে উঠেছিল ১৯৬৭ সাল নাগাদ। ছিন্নমূল বহু মানুষ সেই সময়ে আশ্রয় নেন এখানেই। কিন্তু অর্ধশতক পার করেও এখনও জমির মালিক হওয়া হয়নি তাঁদের। আশায়-আশায় দিন কেটে গিয়েছে। শুধু নেতাজি সুভাষপল্লিই নয়, পাশের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর গেট রামচন্দ্র গোস্বামী রোডের উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দারাও একই সমস্যায় ভুগছেন। উদ্বাস্তু কলোনির মানুষদের জমির মালিকানা সত্ত্ব দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। এত দিনে হয়তো পাইপের জন ভাগ্যে জুটবে।
নেতাজি সুভাষপল্লিতে মোটামুটি ৬০টির বেশি উদ্বাস্তু পরিবারের বাস। আবার তিন নম্বর গেট রামচন্দ্র গোস্বামী রোডের উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাস করেন ৪০টিরও বেশি পরিবার। একটি কলোনি পঞ্চাশ বছর পার করেছে, অপরটির বয়স পঞ্চাশ ছুইছুই। ও পার বাংলা থেকে আসা মানুষগুলো সেই সময়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন এখানে। কিন্তু জমির মালিকানা না-থাকায় এখনও বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা। যে জমিতে বাস সেই জমির দলিল মেলেনি। লিজের বন্দোবস্ত হয়নি। পৌঁছায়নি পাণীয় জলের সংযোগ। বাড়ির জমি নিজের নামে না হলে পাওয়া যাবেনা সেই সংযোগ। একই কারনে ‘হাউজ ফর অল’ বা ‘হাউজ ফর পুওর’ নামে যে সমস্ত আবাস যোজনা রয়েছে তাঁর থেকেও বঞ্চিত এখানকার বাসিন্দারা। সুভাষপল্লির তপন দাস, দুর্গা নন্দী বা রামচন্দ্র গোস্বামী রোড উদ্বাস্তু কলোনির কেষ্ট নন্দী, আনন্দ কর্মকারেরা বলছেন, “এই একটা কারণেই জলের সংযোগ যেমন পাওয়া যায়নি তেমনি সরকারি অনেক প্রকল্পের সুবিধাই আমরা পাই না। দেখি এত দিনে ভাগ্য ফেরে কিনা।”
এই সমস্ত এলাকার মানুষ পেশায় মূলত তাঁত শ্রমিক। ব্যবসার জন্য ঋনের আবেদন করতেও বাড়ির দলিল দেখাতে হয় ব্যাঙ্কে। সেখানেও আটকে যান তাঁরা। অথচ এঁদের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড যেমন রয়েছে তেমনি পুরসভার থেকে হোল্ডিং নম্বরও দেওয়া হয়েছে বাড়ির। পুরকরও দেন। সুভাষপল্লির বাসিন্দা ইউসিআরসির শান্তিপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক অমল নন্দী বলেন, “অনেকবারই প্রশাসনের কাছে বাড়ির দলিলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ফল হয়নি।”
স্থানীয় বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন নন্দী, বৈদ্যনাথ আচার্যরা বলছেন, “সত্যিই যদি আমাদের কলোনিগুলিকে সরকার অনুমোদন দেয় তা হলে অন্তত এই নিরাপত্তার অভাবটা আর বোধ করব না। সব সময়ে ভয় করবে না যে, কেউ তাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের অনেক সুবিধাও হয়তো জুটবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy