Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামে ‘ব্রাত্য’ সুভাষ ডাক পেলেন পুজো-উদ্বোধনে

গ্রাম তাঁকে ব্রাত্য করে রেখেছে। পুজো-অর্চনাতেও কেউ আর তাঁকে ডাকছেন না।

সুভাষ রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

সুভাষ রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৩
Share: Save:

তাঁর লড়াইটা শুরু হয়েছে প্রায় এগারো মাস আগে। এক দিকে তিনি ও তাঁর পরিবার। অন্য দিকে মোড়ল-মাতব্বর-সহ গোটা গ্রামের একাংশ। দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিদিন এই অসম লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের চোঁয়া গ্রামের পুরোহিত সুভাষ রায়চৌধুরী।

গ্রাম তাঁকে ব্রাত্য করে রেখেছে। পুজো-অর্চনাতেও কেউ আর তাঁকে ডাকছেন না। সুভাষের ‘অপরাধ’ বলতে তিনি কন্যাসম এক মুসলিম তরুণীকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন।জলঙ্গির যে তরুণীকে প্রায় এক কাপড়ে তাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর স্বামী। দুই নাবালক পুত্র-কন্যা নিয়ে রাস্তায় বসে থাকা সেই তরুণীকে ঘরে নিয়ে এসেছিলেন সুভাষের মেয়ে কাকলি। গ্রামের মোড়ল-মাতব্বরদের গোসা এখানেই। ইতিমধ্যে সুভাষের যজমানি বন্ধ হয়েছে। সম্প্রতি এক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকেও ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তার পরেও সুভাষ মনুষ্যত্বের সঙ্গে আপস করতে রাজি নন।

মানবিকতা আর সম্প্রীতির নজির গড়া সেই সুভাষকে দিয়েই এ বার দুর্গোৎসবের উদ্বোধন করবে খড়্গপুরের বালাজি মন্দিরপল্লি উন্নয়ন সমিতি। পুজো কমিটির কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে সুভাষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন। দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হবে চতুর্থীর বিকেলে। পুজো কমিটির কার্যকরী সভাপতি দীপক দাশগুপ্ত বলছেন, “আমাদের এ বারের পুজোর থিম ‘মুখ ও মুখোশ’। এখনকার দিনে একই মানুষের একাধিক ভাল-মন্দ রূপ আমরা পুজোয় ফুটিয়ে তুলব। মানুষ ভিতরে একরকম আর বাইরে অন্যরকম। তাই সমাজের এই মুখোশ খুলে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সুভাষবাবুকে দিয়ে পুজোর উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওঁর কাজে আমরা গর্বিত।”

সুভাষ বলছেন, ‘‘খড়্গপুর থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি। আমি নিশ্চয় যাব। গ্রাম আমাকে পর করলেও ওই পুজো উদ্যোক্তারা অন্তত আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ আর যে তরুণীকে কেন্দ্র করে এত কাণ্ড সেই সখিনা বিবি সুভাষকে বাবা বলেই ডাকেন। সখিনার কথায়, ‘‘অপমানে, অপমানে বাবা কুঁকড়ে গিয়েছিল। খড়্গপুর থেকে আমন্ত্রণটা আসার পরে আমরা সবাই খুব খুশি।’’

খড়্গপুর শহর জুড়ে পুজোর উদ্বোধনে অভিনেতা, পুলিশকর্তা, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের দাপট। সেখানে ১০ লক্ষ টাকা বাজেটের এই পুজোর উদ্বোধনে সুভাষের মতো মানুষকে এনে সামাজিক বার্তা দিতে চাইছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক সমীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মাস খানেক আগে সংবাদপত্রে সুভাষবাবুর কথা জানতে পারি। তারপরে ওই এলাকার বিডিও-র মাধ্যমে ওঁর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। দিন পনেরো আগে ওঁর সঙ্গে দেখা করে সব জানাই। তিনিও রাজি হয়েছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Secularism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy