রফিকুলের বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়।
প্রায় রাতেই মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন স্বামী। অভিযোগ, তার পরেই স্ত্রীর উপর শুরু হত নির্যাতন। মঙ্গলবার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু মত্ত স্বামীর গালিগালাজ ও মারধরে অতিষ্ঠ হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী। তার পরেই কোমরে গোঁজা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে স্ত্রীকে গুলি করেন রফিকুল শেখ। ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসকুরা বিবি (২৮)। সুতির শোভারঘাটের ওই ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা রফিকুল। পুলিশ বুধবার রফিকুলের মা মনু বিবি ও বৌদি সরিফা বিবিকে গ্রেফতার করেছে।
তবে পুলিশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। প্রশ্ন উঠছে, রফিকুল ওই আগ্নেয়াস্ত্র পেলেন কোথায় থেকে। শোভারঘাটের বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে গ্রামে অনেকের হাতেই দেখা গিয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র। তাঁদের সন্দেহ, সেই আগ্নেয়াস্ত্র এখনও অনেকের হাতেই রয়ে গিয়েছে।
গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস করলেও মাস দুয়েক আগে বেশ কয়েক জনকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন রফিকুল ও তাঁর দাদা মহিউদ্দিন। বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি সুজিত দাস বলেন, ‘‘রফিকুল ও মহিউদ্দিন আমার হাত ধরেই বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু এই ঘটনা নেহাতই রফিকুলের পারিবারিক ব্যাপার। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।’’
মাসকুরার বাড়ি বীরভূমের রাজগ্রামে। ১২ বছর আগে সুতির শোভারঘাটে বাসিন্দা রফিকুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মাসকুরার দাদা মোস্তাক শেখের অভিযোগ, ‘‘প্রথম দিকে বোনের সংসারে তেমন অশান্তি ছিল না। কিন্তু বছর চারেক থেকে শুরু হয় নির্যাতন। আমাদের বাড়িতেও আসতে দিত না। দিন দিন অত্যাচার বাড়ছিল। বোনও ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে মুখ বুঝে সহ্য করত। প্রতিদিন রাতে মত্ত অবস্থায় বাড়ি ঢুকে রফিকুল বোনকে মারধরও করত।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে মোটরবাইক চালিয়ে মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন রফিকুল। অভিযোগ, ঘুমন্ত মাসকুরাকে বিছানা থেকে তুলে গালাগালি ও মারধর শুরু করেন তিনি। মাসকুরা মরিয়া হয়ে তার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই আগ্নেয়াস্ত্র বের করে খুব কাছ থেকে গুলি করেন রফিকুল। মাসকুরার বাঁ চোখে গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার পরে রফিকুল মোটরবাইক নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই পোঁছে যান বীরভূমের রাজগ্রামে, তাঁর শ্বশুরবাড়িতে।
মাসকুরার কাকা নেহজল শেখ বলেন, “গভীর রাতে মত্ত অবস্থায় জামাইকে আমাদের বাড়িতে দেখে পরিবারের সকলেই খারাপ কিছু আশঙ্কা করেছিলাম। বার বার জামাইকে জিজ্ঞেস করা হয় মাসকুরার কথা। কিন্তু রফিকুল জানায়, মাসকুরা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই সে শ্বশুর-শাশুড়িকে নিতে এসেছে।”
রফিকুলের কথা বিশ্বাস করে মাসকুরার বাবা লতিফ শেখ ও মা রেখা বিবি তাঁর বাইকে উঠে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছন। তখন তাঁরা দেখেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে মাসকুরার নিথর দেহ। খবর পেয়ে সুতি থানার পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। কিন্তু ততক্ষণে গ্রাম ছেড়ে পালান রফিকুল।
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রফিকুলের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তার কাছে কী ভাবে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এল তা তাকে গ্রেফতারের পরেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওই এলাকায় আর কারও কাছে এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র আছে কি না তা-ও গোপনে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy