—প্রতীকী ছবি।
ডিজে-তে রক্ষে নেই, দোসর মাইক! গত কয়েক দিন ধরে পিকনিক পার্টি ও রাজনীতির কারবারিদের মাইকের দাপটে শিকেয় উঠেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পড়াশো।
এক দিকে, বামেদের ডাকা দু’দিনের সারা ভারত বন্ধ, অন্য দিকে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে গত কয়েক দিন ধরে বহরমপুর থেকে লালবাগ, কান্দি থেকে কাগ্রাম, জঙ্গিপুর থেকে জলঙ্গি সর্বত্রই মোড়ের মাথায় চলছে সভা-পথসভা। কোথাও কোথাও ওই রাজনৈতিকগুলি মিছিলও করছে। সেখানেও থাকছে মাইক। তার জেরে মাস খানেক পরে শুরু হতে চলা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বামেদের বন্ধ বা তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ বলেই নয়, মাইক ও শব্দবাজি সারা বছর ধরেই চলছে। বিয়ে বা বর্ষবরণ, পুজো থেকে সরকারি ও বেসরকারি মেলা, রাজনৈতিক দলের সভা— সর্বত্রই মাইকের ব্যবহার প্রতি দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শব্দদূষণ! তার মধ্যে শীতকাল জুড়েই চলে পিকনিক, সেখানেও বেজে চলেছে ডিজে’র মত শব্দদানব।
কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূমানন্দ সিংহ বলছেন, “রাজনৈতিক দলগুলি ছাড়াও যারা পিকনিক করছে, তারাও উচ্চঃস্বরে মাইক বাজাচ্ছে। পুজো-পার্বণ ছাড়াও বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে আতসবাজি এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব হোক বা সাধারণ মানুষ সকলকেই ওই ধরণের কাজ থেকে সরে আসা জরুরি।”
বহড়া আচার্য্য রামেন্দ্র সুন্দর কন্যা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা স্বস্তিকা ঠাকুর বলেন, “শব্দদূষণ যেমন হয় একই ভাবে পড়ুয়াদের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। কিন্তু সারা বছর ধরে যে ভাবে মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান চলছেই। প্রতিবাদ জানানোর মতো কেউ নেই। আর প্রতিবাদ জানাতে গেলেও যা হচ্ছে, ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেও পারছেন না।’’
বামেদের ডাকা বন্ধের সমর্থন চেয়ে গত এক সপ্তাহে কান্দি মহকুমা জুড়ে গোটা দশেক পথসভা হয়েছে। ব্রিগেডের জন্য কান্দি মহকুমা এলাকায় তৃণমূলের পথসভা হয়েছে ২৫টি। তার মধ্যে নিয়মিত ভাবে কান্দি, খড়গ্রাম ও সালারে পথসভা লেগেই থাকে শাসকদলের। পিছিয়ে নেই বামেরাও। শুক্রবার সন্ধ্যায় কান্দির লিচুতলা বাজার, খড়গ্রামের শেরপুর, রবিবার খড়গ্রাম ও কান্দি শহরে মিছিল করে পথসভা হয়েছে। সিমিএমের জেলা কমিটির সদস্য কাজল চক্রবর্তী বলছেন, “মাইকের ব্যবহার হয়তো খারাপ হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থে ওই বন্ধ ডাকা হয়েছে। সে কথা জানাতেই সভা, মিছিল করতে হচ্ছে।”
যদিও তৃণমূলের খড়গ্রাম উত্তর ব্লকের সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মোফিজুদ্দিন মণ্ডল বলছেন, “আইন মেনেই আমরা পথসভা করছি। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষা এখনও অনেক দেরি আছে। আমাদের পথসভার কারণে পড়ুয়াদের কোনও অসুবিধা হবে না। জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার দিক থেকে এগিয়ে আছে। আশা করছি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল
ফলও করবে।”
অভিভাবক অসীম মণ্ডল বলছেন, “সারা বছর ধরেই সভা, মিছিল লেগেই আছে। পরীক্ষার আগে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।” পরীক্ষার্থী অনুরাধা মণ্ডল বলেন, “সন্ধ্যার পরে এলাকায় মাইক বাজিয়ে কোনও অনুষ্ঠান চললে পড়াশোনায় মনঃসংযোগ করতে অসুবিধা হয়।’’
কান্দির মহকুমাশাসক অভীককুমার দাস বলছেন, “গত এক মাসে কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠান ছাড়া কোনও ব্লকে এবং কোনও রাজনৈতিক দলকে মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। কী কারণে মাইক বাজছে, সেটা দেখা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। পুলিশের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy