মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় হলফনামায় প্রার্থীদের দিতে হবে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ও সাজাপ্রাপ্ত মামলার খুঁটিনাটি তথ্য। নির্বাচন কমিশনের এমনই নির্দেশ রয়েছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের ৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন প্রার্থীর (দু’জন বিজেপি, দু’জন তৃণমূল ও এক জন কংগ্রেসের)বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
কারও বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে রয়েছে অপহরণ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ভাঙচুর করে আগুন লাগানোর মামলা। তাঁরা হলফনামায় সেই সব মামলার বিষয়ে উল্লেখও করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় সবথেকে বেশি মামলা রয়েছে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে একটি অপহরণ, দু’টি খুনের চেষ্টা ও অস্ত্র আইনে, দু’টি দাঙ্গা বাধানোর মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ভীতি প্রদর্শন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, অন্যের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ-সহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে।
হুমায়ুন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক লড়াইয়ে না পেরে বাম আমলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পুলিশ যেমন মিথ্যা মামলা করেছিল, তেমনি তৃণমূল আমলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুলিশও মিথ্যা মামলা করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশে এ ধরনের মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী আবু তাহের খানের বিরুদ্ধেও খুনের চেষ্টা, অস্ত্র-আইন, ভাঙচুর করে আগুন লাগানো-সহ মোট তিনটি মামলা রয়েছে। বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে একটি মামলা বীরভূমের বোলপুর থানায়, বাকি মামলা মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, জলঙ্গি, কান্দি ও ভরতপুর থানায় হয়েছে। ২০১১ সালে বহরমপুরে একটি খুন ও অস্ত্র আইনের মামলায় অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালে জলঙ্গি থানায় খুন ও অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, শান্তিভঙ্গে প্ররোচনা দেওয়ার মতোও মামলা রয়েছে।
বহরমপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকারের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে লোহার রড, হাঁসুয়া নিয়ে আক্রমণের একটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি নির্দেশ অমান্য ও বিধিভঙ্গের দু’টি মামলা রয়েছে।
জঙ্গিপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মাফুজা খাতুনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও বালুরঘাট থানায় দু’টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। বেআইনি জমায়েত, ভীতি প্রদর্শন ও রাস্তা অবরোধের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি হলফনামায় জানিয়েছেন, ওই দু’টি
মামলাই রাজনৈতিক।
তৃণমূলের দুই প্রার্থী আবু তাহের খান ও অপূর্ব সরকারকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাসের দাবি, ‘‘১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে খুন-সহ ৩১টি গুরুতর মামলা রয়েছে। কিন্তু তিনি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। দু’দিন আগেই বিষয়টি রাজ্যের বিশেষ পুলিশ
পর্যবেক্ষককে জানিয়েছি।’’
তবে দলের দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে থাকা মামলা নিয়ে অশোক বলেন, ‘‘ওঁদের বিরুদ্ধে অধীর চৌধুরীর মতো খুনের মামলা নেই। রাজনৈতিক আন্দোলন, কর্মসূচি করতে গিয়ে পথ অবরোধ-সহ ছোটখাটো ঘটনার কিছু মামলা হয়েছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন মামলা সংক্রান্ত যে সব তথ্য দেওয়ার কথা বলেছে, আমি সেগুলি হলফনামাতে উল্লেখ করেছি। আসলে ওঁরা নিয়ম না জেনেই এ সব কথা বলছেন।’’ অধীরের দাবি, ‘‘রাজনৈতিক লড়াইয়ে না পেরে তৃণমূল সরকার আমার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্বল করতে চায়। আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা পর্যন্ত জারি করেছিল। দিদি মোদীর বিরুদ্ধে যা বলেন, তা আমার
বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy