Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বদলে গিয়েছে শিবির

মেশিনারির ডিগবাজি

পাক্কা তেইশ বছর পরে এ বার লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে তিনি সারা মুর্শিদাবাদ জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৯
Share: Save:

সে বার তিনি নিজের জেলাতেই ঢুকতে পারেননি। ফৌজদারি মামলায় ফেরার অধীর চৌধুরীর হয়ে সে বার ভোট করেছিলেন তাঁর তৈরি করা ‘ভোট মেশিনারি’।

১৯৯৬ সালে সেই ভোটে সিপিএমের ‘ভিয়েতনাম’ হিসাবে পরিচিত নবগ্রাম কেন্দ্রের বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পাক্কা তেইশ বছর পরে এ বার লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে তিনি সারা মুর্শিদাবাদ জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে ঘর ফিরতি মানুষের মনে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে— ভোট তাঁর সঙ্গেই আছে বটে, কিন্তু সেই ভোট বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার মেশিনারি আছে তো?

ওই প্রশ্ন কেবল অধীর-অনুগত আমজনতার নয়, বিরোধী পক্ষের মুখেও ফিরছে। সদ্য প্রাক্তন, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান খোলাখুলিই বলছেন, ‘‘আমরাই ওঁকে অধীর চৌধুরী তৈরি করেছিলাম। আমরাই ওঁকে নেতা করেছিলাম, আমরাই টেনে নামাব এ বার।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত বহরমপুরের সাংসদ অধীর ভোট-বৈতরণী পার করার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন সদ্য প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার। তিনিও বলেন, ‘‘বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ এ বারের ভোটে নখদন্তহীন বাঘ।’’

তৃণমূলের এক জেলা নেতার ভাষায়, ‘‘সেই নখদন্ত আসলে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদ ও পুরসভার সদস্য, প্রধান, উপ-প্রধান, সভাপতি, সহকারি সভাপতিরা। তাঁদের প্রায় সবাই তো এখন তৃণমূলে। তাঁরাই তো আসল ভোট মেশিনারি। ফলে কংগ্রেসের কপালে এ বার দুঃখ আছে।’’

ওই জনপ্রতিনিধিরাই এ বার তৃণমূল স্তরের আমজনতার সঙ্গে দৈনন্দিনের সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন বলে দাবি করছেন তিনি।

তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘তাঁরাই তৃণমূলের হয়ে ভোটারদের বুথে নিয়ে যাবেন।’’ সেই আপামর ‘তাঁরা’ তৃণমূলে চলে যাওয়ার পরে কংগ্রেসের আকাশ বেশ কালো বলেই দাবি করছে তৃণমূল। এমনকি প্রায় নড়বড়ে বিজেপি’ও।

বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও পুরসভার সদস্যদের তিনি অবশ্য জনপ্রতিনিধি বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘ওরা কিসের জনপ্রতিনিধি? পুলিশের মদতে ওরা কেউ ভোটলুট করা লাঠিয়াল, নয়তো টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া কীট। মনে মনে মানুষ ওদের ঘৃণা করে।’’

তাঁর দাবি, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁদের মতামত লুট করা হয়েছে, তাঁরা এ বারের ভোটে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য ফুঁসছে।’’

তার একটি ‘প্রমাণ’ও পেশ করছেন মনোজ— বুধবার জোড়া ফুল আঁকা তৃণমূলের পতাকা নিয়ে পায়ে হেঁটে বহরমপুরের পথে প্রচারে ব্যস্ত অপূর্ব সরকারের মিছিল থেকেই স্লোগান উঠেছিল, ‘‘ভোট দেবেন কোন খানে?’’ রোল ওঠে, ‘‘হাত চিহ্নের মাঝখানে।’’

অর্পূবর পাশে থেকে অপূর্বর রাজনৈতিক সহকর্মীর মুখ থেকে ওই স্লোগান শুনে গাঁধী কলোনির মহিলারা হেসে কুটিপাটি। মনোজ বলছেন, ‘‘ওই অট্টহাসির মধ্যেই লুকিয়ে আছে কংগ্রেসের ভোট মেশিনারি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE