প্রতীকী ছবি।
তখন ছিল অবিভক্ত বহরমপুর থানা। এখন দৌলতাবাদ থানা। বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের ধারে দৌলতবাদ থানার কলাডাঙা-ঘোষপাড়ার মতো অকিঞ্চিৎকর বাস-স্টপের পাশেই নওদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভোট এলেই বিদ্যালয়টি বুথ হয়ে যায়। সেই বুথের দেওয়ালের পরতে পরতে আজও লুকিয়ে আছে ‘খাসি, মুরগি, নাকি লাঠি?’-র গল্প।
একচল্লিশ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটের টানটান উত্তেজনার কথা আজও ওই গ্রামের প্রবীণেরা দিব্বি মনে করতে পারেন। আজও সেই ভোটকথা স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে মাচার জটলা কিংবা চায়ের দোকানের আড্ডায়।
ভৈরবপাড়ের নওদাপাড়া গ্রামে তখন তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব, প্রতিপত্তি ও বাহুশক্তি তুল্যমূল্য। দু’টি পরস্পর যুযুধান বাম দল। অন্যটি ডান। দাপটের বিচরে এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়! ১৯৭৮ সালের প্রথম পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন রাতে ত্রিশক্তি বেষ্টিত নওদাপাড়া প্রাথমিক স্কুলের বুথে সে এক কাণ্ড ঘটল!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সূর্য সবে পশ্চিম আকাশে গড়িয়েছে। গ্রামে ও স্কুলবাড়ির বুথে তখনও বিদ্যুতের খুঁটি পড়েনি। স্কুলবাড়ির পাশের গৃহস্থবাড়ির জানলা-দরজা গলে হ্যারিকেনের ক্ষীণ আলো মরামাছের চোখের মতো ক্লান্ত রহস্য হয়ে ঠিকরে পড়ছে। নিশুতি রাতের আঁধার চিরে উড়ে আসছে ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেঁয়ে ডাক। ঠিক সেই সময় ভোটকর্মীদের নিয়ে পৌঁছল লজঝড়ে চার চাকার গাড়ি।
ভোটকর্মীদের চোখে ভয়। হাতে হ্যারিকেন, ব্যালট পেপার, সিল, কালি, গাদা গুচ্ছের কাগজের বান্ডিল, চাদর, মশারি, মোমবাতি, জলের বালতি, রাতের খাবার (কলা-পাউরুটি) ও আরও জিনিসপত্র নিয়ে সরকারি ভোটকর্মীরা গাড়ি থেকে নামলেন। সঙ্গে দু’জন হোমগার্ড। তাঁদের ‘অভ্যর্থনা’ জানতে তিন দফায় তিনটি দল বুথের ভিতর পৌঁছয়। তাদের হাতে তিন ব্যাটারি টর্চ আর পাকানো লাঠি। ভোটকর্মীদের তারা বলে, ‘‘আরে করেন কী! আপনারা আমদের অতিথি। আমরা থাকতে কলা-পাউরুটি? সব ব্যবস্থা রেডি। রুটি আর খাসির মাংসের ঝোল, গরম গরম মুরগির মাংস-ভাত। তবে ভোটের দিন আমাদের কথা শুনে চলতে হবে। নইলে কিন্তুু কাঁচা কঞ্চি আর তেল পাকানো লাঠি। এ বার আপনাদের পছন্দের বরাতটা দিন।’’ পৃথক ভাবে, পৃথক সময়ে তিন দলের লোকজন বুথে ঢুকে একই রকম ‘অভ্যর্থনা’ জানায়।
তিন দলের কর্তাদের থেকে কিছুটা সময় চেয়ে নেন সেকেন্ড প্রিজাইডিং অফিসার। কিছু ক্ষণ পরে তিন দলের তিন কর্তাকে পৃথক ভাবে ডেকে নিয়ে সেকেন্ড প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, ‘‘ডান!’’
ভোটের আগের রাতে মাংসের পাতলা ঝোল ভাত, ভোটের দিনের দুপুরে ও রাতেও পাতলা ঝোলের মাংস ভাত খেয়ে সিলছাপ দেওয়া ব্যালট ভরা বাক্স নিয়ে তাঁরা নির্বিঘ্নে বুথ ছেড়েছিলেন। তিন দলের দাবি ছিল, ‘‘আমাদের দলের মরা ভোটার, শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটার ও বিয়ে- সহ বিভিন্ন কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া ভোটারের ‘প্রক্সি ভোট’ দিতে হবে।’’ রহস্যের ঢাকনা খোলেন প্রিসাইডিং অফিসার। বলেন, ‘‘ওই নীতি সব দলের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করব বলায় তিন দলই মেনে নিয়েছিল। মন থেকে ভয় কেটেছিল। শান্তিতে ভোট হয়েছিল। তিন বেলা মাংস ভাতও জুটেছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy