কান্দি মহকুমা হাসপাতাল। ছবি সমাজ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত।
হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে কোথাও নিরাপত্তা রক্ষী নেই, তো কোথাও আবার সামান্য গেটের ব্যবস্থাও নেই। দিনে আলোতে ছয় জন আর রাতে মাত্র চার জন নিরাপত্তা রক্ষীর উপর নির্ভর করতে হয় হাসপাতালের রোগী থেকে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এমনই অবস্থা কান্দি মহকুমা হাসপাতালের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, “দিনের আলোতে কোনও ভাবে বিষয়গুলি মানিয়ে নিলেও রাতের অন্ধকারে অনেক কিছুই প্রথমে আমাদের মতো নার্সদিদিদের হস্তক্ষেপ করতে হয়। ভয় লাগলেও সেটা রোগীদের স্বার্থে সেই কাজটা আমাদের করতে হয়।”
কান্দি মহকুমা হাসপাতালে আটটি ওয়ার্ড। সেখানে প্রায় চারশো শয্যার ব্যবস্থা আছে। ওই মহকুমার কান্দি, বড়ঞা, ভরতপুর ১ ও ২, খড়গ্রাম মোট পাঁচটি ব্লকের বাসিন্দারা ছাড়াও কান্দি পুরসভা ও পড়শি জেলা বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ও পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ব্লকের একটা বৃহত্তর অংশের বাসিন্দারা ওই হাসপাতালের চিকিৎসার উপর নির্ভর করেন। এলাকার মধ্যে এটি একটি বড় হাসপাতাল।
কান্দি মহকুমায় নার্সিংহোমের তেমন চল নেই। সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি নার্সিং হোম হলেও এলাকার বাসিন্দারা কৃষিকাজের উপর নির্ভর করে দিন গুজরান করেন তাই নার্সিংহোমের চিকিৎসা করানোর মতো তেমন সাধ্যে কুলিয়ে উঠতে পারেন না এলাকার বৃহত্তর অংশের মানুষ। ফলে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার উপর নির্ভর করতে হয় বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসককে যে ভাবে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে সেই ঘটনার পর জেলার বহু হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীরা আতঙ্কের মধ্যে নিজেদের কর্তব্য করে চলেছেন। কান্দি মহকুমা হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষী নেই এমনটা নয়, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। ওই হাসপাতালে মাত্র ২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী আছেন। তাঁদের মধ্যে ছয় জন করে দু’টি পর্যায়ে দিনে পাহারা দেন। আর রাতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন মাত্র চার জন নিরাপত্তা রক্ষী। সব মিলিয়ে আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে চার জন নিরাপত্তা রক্ষীর মধ্যে এক জন সারাক্ষণ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থাকেন, এক জন থাকেন মেটারনিটি ওয়ার্ডে। বাকি দু’জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে বেরিয়ে নিরাপত্তার কাজ করে থাকেন।
এক নিরাপত্তা রক্ষীর কথায়, “খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাসপাতালে যার যখন খুশি হাসপাতালে নিজের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ একাধিক গেট, সব গেটে নিরাপত্তা রক্ষী নেই। রাতে মদপ্যরা মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে আসে, কিছু বলতে গেলে আমাদের উপর চড়াও হয়।”
একই অবস্থা হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। চিকিৎসকদের কথায়, “মহিলা শল্য বিভাগে কোনও গেটের ব্যবস্থা নেই। সেখানে কয়েক জন নার্স থাকেন। কিন্তু দিন হোক বা রাত ওই মহিলা ওয়ার্ডে ছেলেদের অবাধ বিচরণ। কে কার কথা শোনে।” চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য পৃথক ভাবে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা আছে হাসপাতালের প্রত্যেক ওয়ার্ডে, কিন্তু ওই বিশ্রাম কক্ষের দরজাও শক্ত নয়। ওই হাসপাতালের কয়েকজন নার্সের কথায়, “আমরা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে থেকেই নার্সিং পড়াশোনা করেছি। খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু কান্দি হাসপাতালের নিরাপত্তাও যে খুব ভালো জায়গাতে নেই সে কথা শোনার মতো লোকও নেই আমাদের হাসপাতালে।” যদিও হাসপাতালের মধ্যে একাধিক সিসিটিভির ব্যবস্থা আছে, হাসপাতালের মধ্যে একটি পুলিশ ক্যাম্পের ব্যবস্থা আছে যেখানে সারাক্ষণ কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও কয়েক জন হোমগার্ড থাকেন।
কান্দির পুরপ্রধান জয়দেব ঘটক বলেন, “আমি যতটা জানি হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষী পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। হাসপাতালে সিসিটিভি আছে তবে আরও কত গুলি সিসিটিভি লাগানো জরুরি সেটা আমরা দেখছি। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তার কোনও অভাব থাকলে আমরা সেটা দেখবো।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, “কান্দি মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোগত অভাব আছে। ওই হাসপাতালে একটি নতুন ভবন হচ্ছে, সেখানে কয়েকটি ওয়ার্ড চালু হলে পুরনো ভবনটি সংস্কার ও আধুনিকীকরণ করার উদ্যোগ হয়েছে। জেলা জুড়ে প্রত্যেকটি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy