Advertisement
E-Paper

‘স্যর আপনি যাবেন না’, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষককে ঘিরে পড়ুয়ারা

স্কুলের কাছেই কাঞ্চননগরে বাবা, মা, স্ত্রী ও বছর দুয়েকের সন্তানকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন কেশবনাথ। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দুমকায়।

শিক্ষককে আটকে পড়ুয়ারা।

শিক্ষককে আটকে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০০
Share
Save

শীর্ষ আদালতের রায়ের পরেও নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছিলেন তিনি। পার্বিক মূল্যায়নে নজরদারিও করেছেন। পরে অন্য স্কুলের চাকরি হারানো শিক্ষকদের ‘চাপে’ আর স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বর্ধমানের কাঞ্চননগর রথতলা হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক কেশবনাথ সাধু। সেই সিদ্ধান্ত জানাতেই ছাত্রছাত্রীদের হাতে বাঁধা পড়লেন তিনি। প্রিয় মাস্টারমশাইকে ছাড়তে নারাজ সকলে। “স্যর আপনি কেন যাবেন?”— ছলছল চোখের পড়ুয়াদের মাঝেই নিরুত্তর দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী কেশব।

স্কুলের কাছেই কাঞ্চননগরে বাবা, মা, স্ত্রী ও বছর দুয়েকের সন্তানকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন কেশবনাথ। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দুমকায়। মামার বাড়ি বর্ধমানে এসে দৃষ্টিহীনদের স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা করে মাধ্যমিকে প্রায় ৮৬ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর পান। এর পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা অনার্সে ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাশ করে ডিএলএড ও বিএড সম্পূর্ণ করেন। ২০১২ সালে প্রাথমিক স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৪ সালে শহরের একটি স্কুলে যোগ দেন। ২০১৬ সালে তিনি এসএসসি দিয়ে পাশ করেন। প্রাথমিকে ৫ বছর ৯ দিন চাকরি করার পরে ২০১৯ সালে রথতলা হাই স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কেশবের দাবি, “আমি এসএসসিতে ৭৯% নম্বর পেয়েছিলাম। নম্বর নিশ্চয় খারাপ নয়। তার পরেও আমি অযোগ্য! যত দিন বাঁচব, এই যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচতে হবে?”

এ দিন ছাত্রছাত্রীর একটাই কথা, “স্যর, আপনি চলে যাবেন কেন? আপনি তো আমাদের ভাল পড়ান। আপনার যাওয়া চলবে না।” জবাব ছিল না কেশবের কাছেও। বিহ্বল হয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিলাম না। চোখের জল আর মনের ব্যথা নিয়েই বেরিয়ে এসেছি। আমার ২২ মাসের সন্তানের ভবিষ্যৎ কী, তাও জানি না।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত বলেন, “ছুটি নেওয়া দূরে থাক, সরকারি ছুটির দিনেও স্কুলে আসতে চাইতেন কেশব। স্কুলের প্রতি তাঁর আনুগত্যের উদাহরণ দিতাম। মিডডে মিল পরিচালনায় তিনিই আমার বড় সহায়ক ছিলেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman SSC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}