Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কিশোরবেলার অপরাধে বাগান পরিষ্কারের রায়

মোক্ষম এক ঘুসি মেরে বসে সে শিক্ষককে। নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের তা মনে আছে এখনও। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মৃন্ময় সরকার
নবগ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০০:১৪
Share: Save:

খুব মন দিয়ে বাগান সাফাই করছিল ছেলেটি। তেমন অভ্যস্ত নয়, তবু আন্তরিকতায় খামতি ছিল না কিছু। মধ্য কুড়ি বয়স, সুঠাম ছেলেটি কপালে ঘাম মুছে বলে, ‘‘ভুল করেছি, সে জন্যই এই শাস্তি। তবে এ কাজ করে সত্যি বড় শান্তি পাচ্ছি!’’

২০০৯ সালের কথা। মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা ছিল অঙ্ক। পরীক্ষা শেষে এক ছাত্র ছোটাছুটি করছিল নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের মাঠে। ছাত্রটিকে ছোটাছুটি করতে দেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিজ্ঞেসা করেছিলেন— ‘কী ব্যাপার এত হুড়োহুড়ি কিসের!’ উত্তর এসেছিল হাতে। মোক্ষম এক ঘুসি মেরে বসে সে শিক্ষককে। নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের তা মনে আছে এখনও।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্কুল চত্বর। পরিস্থিতি সামল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী যায় ঘটনাস্থলে। সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের দেওয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ওই ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। তারপর বহরমপুর জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে হাজির করালে শুরু হয় বিচার।

জামিনে মুক্তি পেলেও গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ ওই ঘটনার রায়ও ঘোষণা করেছে আদালত। রায়ে অভিযুক্ত ওই ছাত্রকে দোষী সাব্যস্ত করে এক মাস নবগ্রাম হাইস্কুলের বাগান সাফাইয়ের সাজা দেওয়া হয়েছে তাকে। আদালতের দেওয়া রায় অনুযায়ী সোমবার সকালে নবগ্রাম হাইস্কুলে পৌঁছে স্কুলের বাগান পরিষ্কার শুরু করেছে ওই ছাত্র।

স্কুল সূত্রে খবর, ওই ছাত্র নবগ্রামের তিলগ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে স্নাতোকত্তর ডিগ্রির জন্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করছেন। ২০০৯’র মাধ্যমিকে নবগ্রাম হাইস্কুলের সিট পড়েছিল নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলে। মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা অঙ্কের দিন নকলে বাধা দেওয়ায় রেগে গিয়ে ওই ছাত্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল। পরে যখন মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয় তখন বেশ ভাল নম্বর নিয়েই পাশ করেছিল ওই ছাত্র। ওই ছাত্র এ দিন স্কুলে এসে স্কুল ভবনের সামনে থাকা বাগান সাফাই করে। ডালপালা ছেঁটে গাছে জল দেওয়া সবই করেছে সে।

তার পর ছায়ায় দাঁড়িয়ে বলে, ‘‘ভুল আমি বুঝতে পেরেছি। তার পর থেকেই বড্ড অনুতাপ হচ্ছিল। তবে, একটা কথা বলব, এমন ভুল আর কেউ যেন না করে।’’ নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাকে আদালতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে বিচারক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কী শাস্তি আমি চাই। বলেছিলাম, তখন ভুল করে ফেলেছে। ওর প্রতি এমন কোনও সিদ্ধান্ত আদালত না নেয় যাতে ওর ক্ষতি হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Garden Juvenile Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy