ফাইল চিত্র
বড় রাস্তা থেকে একটা সরু মেঠো পথ নেমে গিয়েছে বাড়িটার দিকে। পাটকাঠির দরজা, তার পর লাল বারান্দা, এখন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেই বারান্দায় বসে গ্রিলেরর ফাঁক দিয়ে মেঘলা আকাশ দেখছেন এক বৃদ্ধ। সনাতন মণ্ডল। গ্রামের মেঠো বাড়িতে আছেন বটে, তবে মন তাঁর পড়ে রয়েছে ছেলের কাছে, পাহাড়ে, লাদাখ সীমান্তে। বাড়ির সকলে চোখ গেঁথে রেখেছেন টিভির পর্দায়। সনাতন সে সব থেকে অনেক দূরে, বলছেন, ‘‘ছেলেটার কথা বড় মনে পড়ছে গো!’’
স্বপন মণ্ডল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মী। ১০২ ইনফ্যানট্রি ব্যাটেলিয়ানে ইএমই পদে রয়েছেন তিনি। সীমান্তের কাছেই। তবে যুদ্ধ-তপ্ত গালিয়ান উপত্যাকায় নয়। তবে ডাক পড়লে যে সীমান্তে তাঁকেও ছুটতে হবে, সে কথা জানেনমণ্ডল পরিবার।স্বপনের দাদা তাপস বলছেন, ‘‘আমরা তো সারাক্ষণ টিভির মধ্যে ঢুকে বসে রয়েছি। কিন্তু বাবা আর নিতে পারছেন না। তাই বারান্দায় একা বসে বিড়বিড় করেন। হয়ত স্বপনের কথাই ভাবছেন সারাক্ষণ।’’ পারিবারিক সূত্রে জানা গেল, দিন কয়েক আগেও স্বপন ছিলেন একেবারে সীমান্তে। যেখানে যুদ্ধ বেধেছে তার গা ঘেঁষে। সপ্তাহ খানেক আগে সে নেমে আসে নীচে। তার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গালিয়ান।
স্বপনের বাড়ির অদূরেই কৈলাশ মণ্ডলের বাড়ি। সেনাবাহিনীর সেই জওয়ানের ঠিকানাও এখন লাদাখ। তবে তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছেন উত্তরপ্রদেশে। রেজিনগরের কাশিপুরে থাকেন তাঁর বাবা জীতেন্দ্র মণ্ডল। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনিও। শুধু বলছেন, ‘‘এই প্রান্ত বয়সে বড় দুশ্চিন্তায় পড়লাম গো!’’
বস্তুত রেজিনগরের ওই এলাকা এখন বাস্তবিকই যেন লাদাখে ডুবে রয়েছে। স্থানীয় বেলডাঙা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রতীপকুমার মণ্ডল বলেন, “এলাকার অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাদাখে রয়েছে। পরিবারগুলোর উদ্বেগের কথা বুঝি। দেখাও করে এসেছি। যে কোনও প্রয়োজনে ওঁদের পাশি আমি আমরা।”
কাশীপুর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা ইসমাইল মণ্ডলও লাদাখে কর্মরত। তিনি সেনাবাহিনীর রাইফেল মেইনটেন্স-কর্মী। গত চার বছর ধরে রয়েছেন ওই নিঝুম পাহাড়ে। দিন পাঁচেক আগে ইসমাইল ফোন করেছিলেন। তার পরেই তপ্ত হয়েছে উপত্যাকা। কথাও আর হয়নি। একটা দমচাপা অবস্থায় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। ইসমাইলের মা মেহেরনিকা বিবি বলেন, “টিভিতে সীমান্তের ছবি দেখছি আর কেঁপে উঠছি। ছটফট করছি, কবে যে ছেলেটার ফোন আসবে! সেই থেকে বাড়িতে কারও মুখে রুচি নেই। সব কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy