Advertisement
E-Paper

Independence Day Celebration: চরের এই মাটি ভারতের, সময় বাংলাদেশের

নব্বইয়ের দশকের শেষে বসে ওই কাঁটাতারের বেড়া। গাঁয়ের পশ্চিমে। পুবে মাথাভাঙা, ও পারে বাংলাদেশ (‌‌‌সে দিনের পূর্ব পাকিস্তান)।

জাতীয় পতাকা হাতে খুদের দল।

জাতীয় পতাকা হাতে খুদের দল। ফাইল চিত্র।

অমিতাভ বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ০৮:৫১
Share
Save

বছর দশেকের ছেলেটা তো বটেই, তার বাপ-কাকা, গাঁয়ের লোকে টেরই পায়নি যে কখন দেশটা স্বাধীন হয়ে গিয়েছে। দু’টুকরো যে হবে, তা অবশ্য তারা শুনেছিল। যে দিন মধ্যরাতে পণ্ডিত নেহরুর বক্তৃতায় নিদ্রিত ভারত চোখ মেলল, মাথাভাঙার কোল ঘেঁষা চর মেঘনায় তখন নিকষ অন্ধকার। সারা দিন গতর খেটে বাসিন্দারা ঘুমে অচেতন। চরে আখের চায হয়। ফসল উঠলে যমশেরপুর জমিদার বাড়ি থেকে আখ-মাড়ানো কল আনতে হয়। গাঁয়ের লোকের সঙ্গে বছর দশেকের বালক কিরণও গিয়েছিল। ফেরার পথে বিপত্তি। গরুর গাড়িতে চাপিয়ে সেই কল নিয়ে তাঁরা ফিরছেন, গ্রাম থেকে প্রায় এক মাইল দূরে গাড়ি আটকানো হল— ভারতের কল পাকিস্তানে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না!

কিরণের কথায়, “সে দিনই জানতে পারি দেশ স্বাধীন হয়েছে।”

আর সকলের মতো চর মেঘনার মানুষও শুনেছিল, দেশ ভাগ হবে। ইন্ডিয়া-পাকিস্তান করে দিয়ে সাহেবরা দেশ ছাড়বে। এমনকি এ-ও শুনেছিল যে এই মাথাভাঙা নদী সমেত তারা সকলেই পূর্ব পাকিস্তানে চলে যেতে পারে। কিন্তু কখন যে নদিয়া টুকরো হয়ে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙা, মেহেরপুর পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছে, তারা টেরও পায়নি। সে সব মিটে গিয়েছে, সে-ও প্রায় ছ’সাত মাস হল।

তারা এখন তবে কোন দিকে? চর মেঘনা কি পাকিস্তানে? কিরণেরা এর উত্তর খুঁজেছেন বহু দিন। তার পর এক দিন ভোট হল। চরে বুথ হল। কিরণ তখনও ছোট, বড়রা ভোট দিল। সেই ভোটে মন্ত্রী হল, প্রধানমন্ত্রী হল। কিন্তু কিরণদের পায়ের নীচের জমি নিজের হল না। আজও হয়নি। কিরণ বিশ্বাসের বয়স এখন ৮৫।

বাড়তি উপহার জুটেছে কাঁটাতার।

নব্বইয়ের দশকের শেষে বসে ওই কাঁটাতারের বেড়া। গাঁয়ের পশ্চিমে। পুবে মাথাভাঙা, ও পারে বাংলাদেশ (‌‌‌সে দিনের পূর্ব পাকিস্তান)। ২০০৫ সালে গাঁয়ে বসে বিএসএফ ক্যাম্প। কিন্তু গোলমাল হল, সাবেক হিসাবে এই গাঁ চর পাকুড়িয়া মৌজার অন্তর্গত, যা এখন বাংলাদেশে। তা নিয়ে কত যে জটিলতা! কিছু দিন হল ‘সেটলমেন্ট’ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাগজপত্র এখনও কারও হাতে আসেনি।

শুধু কি চরের মাটি?

কাঁটাতারের বেড়ার ১২০ নম্বর গেট পেরনোর সময়ে হঠাৎ খেয়াল হয়, ঘড়ি আধ ঘণ্টা আগে চলছে। শুনে বেজার মুখে বিএসএফ জওয়ান বলেন, “বাংলাদেশ কা টাইম হ্যায়, আধা ঘণ্টা মাইনাস কিজিয়ে।"

চর মেঘনার সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন সুধীর বিশ্বাস। সহ্য করেছেন নিজভূমে পরবাসী হয়ে থাকার যন্ত্রণা। বলেন, “বাংলাদেশি গন্ধটা আমাদের গাঁ থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। এখানে এলে সময় পর্যন্ত পাল্টে যায়! কবে যে সব মিটবে, জমি হবে নিজেদের নামে, সে কি আর বেঁচে থাকতে দেখতে পাব?"

সুধীরের জন্ম সাতচল্লিশে, তিনি স্বাধীনতারই বয়সি।

independence day 75th Independence Day 15 August Karimpur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}