Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নৌকা থেকে নামে থলি ভর্তি ‘পেপসি’

রাতের অন্ধকারে নৌকা এসে দাঁড়াল হরিপুরে ভাগীরথীর চরে। সেখানে অবশ্য কোনও স্থায়ী ঘাট নেই। তা-ও নৌকাগুলো সেই ঘাসপাতা ঘেরা নির্জন জায়গাটাতেই হামেশাই এসে দাঁড়ায়। তার পর দ্রুত হাতবদল হয় ‘পেপসি’!

 নৃসিংহপুরের চৌধুরীপাড়ায় বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলছেন তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়

নৃসিংহপুরের চৌধুরীপাড়ায় বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলছেন তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়

  দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিত হালদার
নবদ্বীপ ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে নৌকা এসে দাঁড়াল হরিপুরে ভাগীরথীর চরে। সেখানে অবশ্য কোনও স্থায়ী ঘাট নেই। তা-ও নৌকাগুলো সেই ঘাসপাতা ঘেরা নির্জন জায়গাটাতেই হামেশাই এসে দাঁড়ায়। তার পর দ্রুত হাতবদল হয় ‘পেপসি’!

চোলাই মদের এটাই হল স্থানীয় নাম! বড় বড় নাইলনের থলিতে থরে-থরে সাজানো থাকে পেপসি। নৌকা ভরে আনা হয় এই রকম অসংখ্য থলি। লোকচক্ষুর আড়ালে নদীর পাড়ে থলিগুলো নামানো হয়। অপেক্ষায় থাকে কিছু ছায়ামূর্তি। থলি নামানো হলেই সেগুলি নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। নৌকাও উধাও হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি সড়ক পথে ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় চোলাই মদের ব্যবসায়ীরা তাদের ‘রুট’ বদল করতে শুরু করেছে। নদী পথই তাদের কাছে এখন বেশি নিরাপদ। মদ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হল ছোট-ছোট পানসি নৌকা। তাতে করেই চোলাই পৌঁছে যাচ্ছে নদিয়া জেলার বিভিন্ন ‘পয়েন্ট’-এ। সেখানেও অপেক্ষায় থাকে কিছু বাহক। মোটরবাইক বা সাইকেলে চোলাইয়ের প্যাকেট নিয়ে তারা ছড়িয়ে দেয় জেলার প্রত্যন্ত সব এলাকায়। আগে গাড়ি ব্যবহার করা হত। তাতে ঝুঁকি বেশি বলে এখন দু’-চাকাতেই তারা ভরসা রাখছে।

অল্প খরচে নেশার জন্য সমাজের এক শ্রেণির মানুষের পছন্দ এখনও চোলাই। পুলিশ জানিয়েছে, সেই সুযোগটাই নিচ্ছে চোলাই ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর আগেও জেলার শহরগুলির মূলত স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় চোলাইয়ের ঠেক দেখা যেত। এখন বাংলা মদ অনেক সহজলভ্য হয়ে পড়ায় চোলাইয়ের দাপট শহরাঞ্চলে অনেকটাই কমেছে। বরং তা ছড়িয়ে পড়ছে জেলা শহরের বাইরে আরও প্রত্যন্ত এলাকায়, পিছিয়ে পরা গ্রামগুলিতে। ছড়িয়ে পড়ছে ইটভাটাগুলিতেও। বেশ কিছু আদিবাসী গ্রামে ছোট মদের ভাটির সন্ধান পাওয়া গেলেও বড় মদের ভাটি এখন অনেক কমেছে। সেই ঘাটতি মেটাতে প্রচুর পরিমাণ চোলাই ঢুকছে পাশের বর্ধমান ও হুগলি জেলা থেকে। বর্ধমানের চর এলাকায় কোথাও কোথাও এখনও ভাটিখানায় তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, চোলাইয়ের অন্যতম উৎসস্থল এখন হুগলি জেলা। বিশেষ করে বলাগড় এলাকার বগা, মগরা এলাকার নামাজগড় এলাকা থেকে পাউচে ভরে চোলাই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। বেশির ভাগটাই আসছে নদী পথে। কিছুটা আবার কল্যাণীর ঈশ্বরচন্দ্র সেতুর উপর দিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে ঢুকছে। দু’শো ও চারশোর পাউচে। নদিয়ায় দু’শোর প্যাকেটের চাহিদা বেশি।

অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে চোলাই ব্যবসায়ীরা পুলিশ, আবগারি দফতরের কর্তা ও স্থানীয় নেতাদের অনেককে হাতে রেখে কাজ চালিয়ে যায়। বছরখানেক আগে তাহেরপুরের বাদকুল্লা এলাকার প্রায় সব ক্লাব একজোট হয়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানানোর পরেও সেখানে চোলাই মদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা সমর চক্রবর্তীর কথায়, “এর থেকেই কি স্পষ্ট হয় না যে, এই নিষিদ্ধ ব্যবসার পিছনে উপরের মহলের মদত রয়েছে?”

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Hooch Partha Chatterjee Adulterated Hooch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE