প্রতীকী ছবি।
মাস কয়েক আগে চাপড়া এলাকায় হেরোইনের ঠেকে খুন হতে হয়েছিল এক নেশাগ্রস্তকে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছিল, ওই ব্যক্তি হেরোইনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। হেরোইন বিক্রিকে কেন্দ্র করে রেষারেষির জেরেই খুন হয়েছিল সে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে হেরোইন জোগাড় করতে না পেরে জেলায় এক কিশোরীর আত্মঘাতী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে দু’দিন আগে। তার স্বামীও নেশা করেন বলে জানা গিয়েছে।
হেরোইন সংক্রান্ত এমন একাধিক ঘটনা সম্প্রতি সামনে আসায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের। অনেকেই দাবি করছেন, জেলা জুড়ে বেড়ে চলেছে হেরোইনের রমরমা কারবার। এদের সঙ্গে কখনও-কখনও পরোক্ষ ভাবে শাসক দলের স্থানীয় নেতা-জনপ্রতিনিধিদের জড়িত থাকার অভিযোগও উঠছে। তাঁদের অনেকের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেওয়ায় অনেক মাদকবিক্রেতাকে ধরা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে।বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলছেন, “আমাদের দল মতাদর্শগত ভাবে নেশার বিরুদ্ধে। আমাদের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতেই পারে না।” তাঁর দাবি, “শাসকদলের নেতারাই হেরোইন চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জানতে পারছি।” যা শুনে তৃণমূলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জয়ন্ত সাহা বলছেন, “অনেক আগেই পুলিশকে বলেছি যে, যেমন করেই হোক হেরোইন বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এই চক্রের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের সকলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে।”
কয়েক বছর আগেও কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, পলাশিপাড়া এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমিতে পোস্ত চাষ হত। পোস্তর ফলের থেকে আঠা সংগ্রহ করে তৈরি হত আফিম। আর সেই আফিমের সঙ্গে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হত হেরোইন। কালীগঞ্জের বড় চাঁদঘর, ছোট চাঁদঘরের পাশাপাশি পলাশিপাড়ার বড় নলদা, ছোট নলদা, পলসন্ডা, ধাওড়া এলাকায় বহু বাড়িতে তৈরি হত হেরোইন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও তা পৌঁছে যেত কলকাতা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের লালগোলা, বর্ধমান, বীরভূম হয়ে পাশের রাজ্যে।
কয়েক বছর ধরে পুলিশ ও প্রশাসনের লাগাতার অভিযানে পোস্ত চাষ প্রায় বন্ধ। কিন্তু বন্ধ হয়নি হেরোইন তৈরি ও বিক্রি। বরং তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ। স্কুল, কলেজের পড়ুয়া থেকে শুরু করে ঝুপড়ি এলাকার বাসিন্দারা এই নেশার কবলে পড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। হেরোইন কেনার টাকা জোগাতে বেড়ে চলেছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি বীরভূম থেকে বর্ধমানের উপর দিয়ে ভাগীরথী নদী পার হয়ে আফিম ঢুকছে নদিয়ায়। কলীগঞ্জ, পলাশিপড়ায় বিভিন্ন গ্রামে গোপনে ‘পাতন প্রক্রিয়ার’ মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে হেরোইন। নিম্ন মানের ‘ক্রুড’ হেরোইন রেখে দেওয়া হয় স্থানীয় নেশাড়ুদের জন্য। কারণ, এর দাম কম। উচ্চমানের হেরোইনের দাম এক কেজি ১ কোটি থেকে ১ কোটি ২০ লক্ষের মধ্যে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বা ট্রেন পথে তা কলকাতায় চলে আসে। কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার হেরোইনও আছে। আবার ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েও এক কেজি হেরোইন পাওয়া যায় বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এই সব হেরোইন চলে যায় মূলত পাশের জেলা মুর্শিদাবাদে। সেই সঙ্গে ভাগীরথী নদী পার হয়ে বর্ধমান। সেখান থেকে বীরভূম। ব্রাউন সুগারের দামও প্রায় একই রকম। ভাল মানের ব্রাউন সুগার মেলে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা কেজিতে। তবে নদিয়াতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিম্ন মানের ‘ক্রুড’ বিক্রি হয় বেশি। এক কেজি ক্রুডের দাম দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। তা বিক্রি হচ্ছে পুরিয়া করে। বাজারে এক পুরিয়ার দাম দেড়শো থেকে আড়াইশো টাকার মধ্যে। এক-একটি পুরিয়া হয় ৫০ থেকে ৬০ মিলিগ্রামের। দিন কয়েকের মধ্যে কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া ও পলাশিপাড়া এলাকায় একাধিক হেরোইন বিক্রেতা ও পাচারকারী গ্রেফতার হয়েছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায় বলেন, “ধারবাহিক ভাবে হেরোইনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। হেরোইন উদ্ধর করা হচ্ছে। গ্রেফতারও হচ্ছে অনেকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy