Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
RG Kar Rape and Murder Case

খুন-ধর্ষণে অপরাধী নন সঞ্জয়? রায় ঘোষণার পর ‘সংশয়ী’ জুনিয়র ডাক্তারেরা, ‘সেটিং’ তত্ত্বের অবতারণা

জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের বিবৃতিতে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। সঞ্জয় রায় যে অপরাধী, তা নিয়ে সংগঠন সংশয় প্রকাশ করছে না। কিন্তু সঞ্জয় খুন-ধর্ষণে যুক্ত কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে লিফলেটের বয়ানে।

Sanjay Roy not a perpetrator of RG Kar victim’s rape and murder? Indication of doubt in WBJDF’s leaflet after court verdict

সঞ্জয় রায়ের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার খবরেও হতাশ জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৩
Share: Save:

সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় খুশি নয় জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। শনিবার শিয়ালদহ আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে আরজি কর-কাণ্ডে এই প্রথম কেউ দোষী সাব্যস্ত হল। কিন্তু ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ লিফলেট ছাপিয়ে দাবি করেছে, বিচার পাওয়া যায়নি। লিফলেটের দ্বিতীয় লাইনেই লেখা ‘বিচার কাঁদে নিভৃতে’। শেষ লাইনে লেখা ‘দেশের স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে কেন?’

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন ঘিরে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশে উত্তপ্ত প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে। কলকাতায় সে আন্দোলনের পুরোভাগে দেখা গিয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। আদালতের রায়ের পরে তাঁদের সংগঠনের বিবৃতিতে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। আদালত যাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, সেই সঞ্জয় যে অপরাধী, তা নিয়ে সংগঠন সংশয় প্রকাশ করছে না। কিন্তু সঞ্জয় খুন-ধর্ষণে যুক্ত কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে লিফলেটের বয়ানে।

মোট ২০টি প্রশ্ন তুলেছে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। সিংহভাগ প্রশ্নেই তদন্তপ্রক্রিয়ায় ‘ফাঁক’ থেকে যাওয়া সংক্রান্ত। প্রথম প্রশ্ন, নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মাথায় রক্তক্ষরণের উল্লেখ রয়েছে, যা কঠিন কিছুতে আঘাত লাগার কারণে হতে পারে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে, সেমিনার রুমে (ঘটনাস্থল হিসেবে চিহ্নিত) কোথাও কোনও ধস্তাধস্তি বা রক্তের চিহ্ন মেলেনি। তা হলে ঘটনাস্থল কি আদৌ সেমিনার রুম? ঘটনাস্থলের সংলগ্ন ঘর তড়িঘড়ি কেন সংস্কারের ‘অজুহাত’ দেখিয়ে ভেঙে ফেলা হল? সেমিনার রুমই ‘আসল’ ঘটনাস্থল, না কি লাগোয়া যে ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছিল, সেখানে কোনও প্রমাণ থেকে গিয়েছিল? এই ধরনের প্রশ্নই আকারে-ইঙ্গিতে তোলার চেষ্টা হয়েছে সংগঠনের তরফে।

নির্যাতিতার নখ এবং শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে যে সব নমুনা সংগৃহীত হয়েছিল, সে সবের ফরেন্সিক পরীক্ষায় সঞ্জয় ছাড়াও অন্তত আরও এক জনের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে বলে লিফলেটে দাবি করেছে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। সেই এক জন কে, তা সিবিআই কেন খুঁজে দেখছে না, সেই প্রশ্নও করেছে তারা। নির্যাতিতার মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় রাত আড়াইটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে বলে লিফলেটে লেখা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে আরজি করের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয় ছাড়াও আরও অনেককে দেখা গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রশ্ন: একমাত্র সঞ্জয়কেই চিহ্নিত করা হল কেন? বাকিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা কি তদন্তকারীরা করেননি?

‘তড়িঘড়ি’ মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার করে দেওয়া, পরবর্তী কয়েক দিনে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, ফরেন্সিক রিপোর্টে উঠে আসা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তদন্ত না করা, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘ফাঁক’, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সিসিটিভি ফুটেজকে ঠিক মতো কাজে না লাগানো— পুলিশ এবং সিবিআইয়ের ভূমিকা সম্পর্কে এমন অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

লিফলেটে এসেছে বামেদের তোলা ‘কেন্দ্র-রাজ্য সেটিং’ তত্ত্বও। যদিও সিপিএমের তোলা ওই ‘সেটিং’-তত্ত্বকে আসলে গণমাধ্যম এবং ‘লোকমহলে’ চর্চিত একটি তত্ত্ব বলে দাবি করা হয়েছে।

শেষ প্রশ্নে লেখা হয়েছে, অপরাধী রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান নয় বলেই কি এত তাড়াতাড়ি তাঁকে শাস্তি দেওয়া গেল? নির্যাতিতার ধর্ষণ-খুনের অপরাধীরা ক্ষমতাবান বলেই কি তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে? অর্থাৎ, সঞ্জয় আদৌ ধর্ষণ-খুনের অপরাধী কি না, তা নিয়ে প্রকারান্তরে সংশয়ই প্রকাশ করছেন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত জুনিয়র চিকিৎসকরা।

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Rape and Murder Case R G Kar Medical College and Hospital Sanjay Roy Sealdah Court WBJDF Kolkata Police CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy