Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

নির্মাণ শ্রমিককে ভরসা দিতে পারে আবাস যোজনা

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে,  আগামী এক বছরে প্রায় ১০ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের।

ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে নিজের গ্রামের দিকে। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে নিজের গ্রামের দিকে। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০৪:৪৫
Share: Save:

কাজ হারিয়ে জেলায় ফিরে আসা শ্রমিকদের একটা বড় অংশই নির্মাণ শ্রমিক। এই মুহূর্তে ফের ভিন্ রাজ্যে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এই অবস্থায় বাংলা আবাস যোজনায় কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ভরসা হতে পারে নির্মাণ শ্রমিকদের, এমনটাই মনে করছেন জেলার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, আগামী এক বছরে প্রায় ১০ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের। বিগত বছরের বহু বাড়ির নির্মাণ কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। জুনের মধ্যে সে কাজ শেষ করতে হবে। এই অবস্থায় সেই নির্মাণ কাজে এ জেলার নির্মাণ শ্রমিকদের কাজে লাগানো গেলে তাঁরা কিছুটা হলেও রুজি ফিরে পেয়ে আর্থিক সংস্থান পেতে পারেন বলে মনে করেন অরঙ্গাবাদ কলেজের অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কিশোর রায়চৌধুরী।

দু’বছর আগে এই আবাস যোজনা প্রকল্পে ভাল কাজের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা। গড়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় এই প্রকল্পে ঘর নির্মাণ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার। ১.২০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ প্রতি ঘরে গ্রামাঞ্চলে। শহরাঞ্চলে ৩.৬৮ লক্ষ টাকা। এই আবাস যোজনায় একটি শোওয়ার ঘর, রান্নাঘর, বারান্দা, শৌচালয় থাকে। স্বভাবতই বেকার নির্মাণ শ্রমিকদের এই ঘর তৈরির কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।

সিটুর জেলা সভাপতি জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের কাছে এ দাবি আমরা পেশ করেছি। এই মুহূর্তে কাজ নেই জেলার নির্মাণ শ্রমিকদের। আবাস যোজনায় তাঁদের কাজ দেওয়া গেলে তাদের হাতে কিছু টাকা ঢুকবে। সবাই না পেলেও, অন্তত লক্ষাধিক নির্মাণ শ্রমিক অসময়ে কাজ পেয়ে উপকৃত হবেন।”

কংগ্রেসের জেলার মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলছেন, “আবাস যোজনার একটা মোটা অর্থ কাটমানি দিতে হয় উপভোক্তাদের। প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি বরাদ্দ অর্থ উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে যায়, তা হলে ঘরটাও মজবুত হতে পারে। অভিজ্ঞ নির্মাণ শ্রমিকেরা উপভোক্তাদের ঠিক মতো পরামর্শ দিতে পারে ঘর তৈরিতে।”

জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “এই প্রস্তাব কার্যকরী করা গেলে জেলার রুজি হারানো নির্মাণ শ্রমিকেরা অনেকেই কাজ পাবেন মাস ছ’য়েকের জন্য। শহরে ৩.৬৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ঘর প্রতি। সে ক্ষেত্রে কাজের দিন সংখ্যাও বাড়বে। মুর্শিদাবাদের নির্মাণ কর্মীরা দক্ষ বলেই তো মুম্বইয়ের মতো জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারছেন। তাই শুধু এ জেলাতেই নয়, কাজের সুযোগ পাবেন তারা অন্য জেলাতেও।”

সাগরদিঘির রাজমিস্ত্রি রমজান আলি বলছেন, “জেলায় মজুরি কম বলেই আমরা কেরলে যাই। এখন ভিন রাজ্যে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষের হাতে পয়সাও নেই যে তাঁরা বাড়ি করতে পারবেন। তাই সরকারি আবাস প্রকল্পে মজুরি কম পেলেও কাজ করতে আপত্তি হবে না কারও।’’

অর্থনীতির শিক্ষক কিশোরবাবু বলছেন, “আবাস যোজনায় ভিন রাজ্যের চেয়ে কম মজুরি পেলেও নির্মাণ শ্রমিকরা কাজটা করতে পারবেন। এই মুহূর্তে জেলার আর্থিক অবস্থায় এই ভাবেই ভাবতে হবে মানুষকে রুজি দেওয়ার কথা।”

সাগরদিঘির বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু অবশ্য বলছেন, “টাকা যায় উপভোক্তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে। বাড়ি তৈরির দায়িত্বটাও তাঁর। এক্ষেত্রে সরকারি ভাবে প্রশাসনের কিছু করার নেই। তবে উপভোক্তারা নির্মাণ শ্রমিকদের যাঁকে দিয়ে খুশি কাজ করাতেই পারেন।”

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আবাস যোজনায় টাকা দেওয়াটাই সরকারের সব থেকে জরুরি কাজ, সেই টাকা নির্মাণ শ্রমিকদের হাত ঘুরে বাজারে ফিরবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy