রঙিন মাছের দোকান। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।
একলা ঘরে মন ভাল নেই ছোট্ট ছেলেটার। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দূরের কথা, দেখাই হয় না।
দিনভর মোবাইল গেমে মাথা গুঁজে পড়ে থাকা বাচ্চাকে কী ভাবে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখা যায় তা ভাবতে ভাবতে বাবার মাথায় আসে, একটা অ্যাকুয়ারিয়াম কিনলে কেমন হয়? বাড়িতে আসে ছোট অ্যাকুয়ারিয়ামে রঙিন মাছ। বাচ্চার হাতের মোবাইল হয়ে ওঠে ক্যামেরা। মাছের ছবি তুলে, মাছেদের গতিবিধি নজর রেখে এখন সময় কাটছে ছোট্ট ছেলেটির।
অতিমারির গৃহবন্দি জীবনে এমন উদাহরণ অসংখ্য। করোনাকালে যখন বিভিন্ন ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে, সে জায়গায় দাঁড়িয়ে রঙিন মাছের বিক্রি বেশ কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন অধিকাংশ রঙিন মাছ বিক্রেতা। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যোগাযোগ ব্যবস্থা কম, বিদেশ থেকে মাছ আমদানি আরও দুঃসাধ্য। সেই কারণে দেশি-বিদেশি প্রায় সমস্ত রঙিন মাছেরই দাম বেড়েছে অনেকটা। যেমন তাইল্যান্ড থেকে আসা এক জোড়া প্যারটের দাম আগে যেখানে ছিল ৫০০ টাকা, এখন তা-ই হয়েছে ৮০০ টাকা। ১২০০ টাকার একটা ফ্লাওয়ার হর্নের দাম বেড়ে ১৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে সেই তুলনায় দেশি মাছের দাম কম বেড়েছে বলেই জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।
শুধু মাছ নয়। দাম বেড়েছে অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখা শো-পিস থেকে রঙিন পাথর বা বিভিন্ন যন্ত্রাংশেরও। তবুও মাছের চাহিদা বাড়ছে প্রতিদিন। শুধু শহরেই নয়। রঙিন মাছ পোষার শখ এখন গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন অনেক বিক্রেতা। তবে বিক্রেতাদের অনেকের মতেই, এখন যাঁরা মাছ কিনতে আসছেন তাঁদের অধিকাংশেরই অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ রাখা সম্বন্ধে কোনও ধারণা নেই। তাঁরা সদ্য শুরু করছেন। নানা জাতের মাছ তেমন চেনেনও না।
কৃষ্ণনগর সদর হসপিটাল মোড়ে পাশাপাশি দুটো রঙিন মাছের দোকান সঞ্জয় বিশ্বাস ও সৌরভ চক্রবর্তীর। সঞ্জয় বলেন, “গত বছর লকডাউনে যখন দোকান বন্ধ ছিল, তখনও লোকে আমার মোবাইল নম্বর জোগাড় করে বাড়ি এসে মাছ নিয়ে যেত। চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে মাসে দু’বার গাড়ি ভাড়া করে কলকাতা থেকে মাছ নিয়ে আসতে হত। এ বছর চাহিদা গত বারের মত না হলেও করোনা পূর্ববর্তী সময়ের থেকে অনেকটাই ভাল।”
তাঁদের কাছেই জানা গেল, ছোট থেকে মাঝারি মাপের অ্যাকুয়ারিয়ামে সস্তার গোল্ড ফিশ, মলি, এঞ্জেল, চিকলেট, টাইগার বার্ব-এর মতো মাছ রাখার চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। “আমাদের মতো মফস্সল শহরে খুব দামি মাছ রাখার মতো মানুষের সংখ্যা খুব কম। আর লকডাউনে যারা অ্যাকুয়ারিয়াম নিচ্ছেন তাঁরা বেশির ভাগই ১০০-২০০ টাকার মধ্যে মাছের খোঁজ করেন। এ ছাড়া কম যত্নে রাখা যাবে এমন মাছেরও খোঁজ করেন অনেকে”— যোগ করেন সঞ্জয়।
সৌরভ বলেন, “সমস্যা একটাই। চাহিদা থাকলেও অ্যাকুয়ারিয়ামের সমস্ত উপকরণ পর্যাপ্ত মিলছে না। যে সব উপকরণ বিদেশ থেকে আসত, সেগুলো ঠিক মতো এসে পৌঁছচ্ছে না। বড় বিক্রেতাদের ঘরে যেটুকু মাল আগে থেকে মজুত আছে, সেগুলোই বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে আমাদের মতো খুচরো বিক্রেতাদের।”
করোনা আসার আগে একবেলা খোলা থাকত কৃষ্ণনগর হাতারপাড়ায় সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের রঙিন মাছের দোকান। “এখন চাহিদা এত বেড়েছে যে দু’বেলা খোলা রাখতে হচ্ছে,” বলেন সঞ্জয়। সেখানেই মেয়েকে নিয়ে মাছ কিনতে এসেছিলেন স্কুলশিক্ষিকা ঝর্ণা দত্ত। ঝর্ণা বলেন, “বছর দুই আগে মোটে দুটো মাছ রেখেছিলাম অ্যাকুয়ারিয়ামে। কিন্তু ঘরবন্দি জীবনে ওরাই আমাদের চোখের তৃপ্তি হয়ে উঠেছে। এখন ওই অ্যাকুয়ারিয়ামেই প্রায় ন’রকম মাছ আছে। বিকেল বেলাটা অ্যাকুয়ারিয়ামের সামনে বসে দিব্য কেটে যায়।”
সেখানেই অ্যাকুয়ারিয়াম কিনতে এসেছিলেন দেবাশিস বিশ্বাস। তিনি বলেন, “করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শুনছি বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হবে। সেই ভয়ে ছোট বাচ্চাটিকে বাড়ির বাইরে কোনও ভাবেই বেরোতে দিচ্ছি না। ঘরের মধ্যে রঙিন মাছ দেখে ওর ভাল লাগবে বলেই অ্যাকুয়ারিয়াম কিনতে আসা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy