গ্রেস কটেজে। নিজস্ব চিত্র
নদিয়ায় নজরুল মানেই কৃষ্ণনগর। বিশেষ করে, গ্রেস কটেজ। জানুয়ারি ১৯২৬ সাল থেকে ডিসেম্বর ১৯২৮। এই কাল-পর্বে সপরিবার কৃষ্ণনগর বাস নজরুল ইসলামকে আমূল বদলে দিয়েছিল, এমনটাই বলেন নজরুল-গবেষকেরা। হিন্দু মেয়ে প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করার ‘অপরাধে’ কলকাতায় ক্রমশ বন্ধুহীন এবং উপার্জনহীন হয়ে পড়লেন নজরুল। বলতে গেলে, তাঁকে বয়কট করা হয়। ‘প্রবাসী’-সহ যাবতীয় পত্রপত্রিকা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত, রোগাক্রান্ত কবিকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কাজী সাহেবের বিপ্লবী বন্ধু তথা অভিভাবক হেমন্তকুমার সরকার।
কৃষ্ণনগরে এসে কবির প্রথম ঠিকানা হয় গোলাপট্টির মদন সরকার লেনে, হেমন্ত সরকারের পৈত্রিক বাড়ির একটি অংশে। মাসকয়েক থাকার পর ঠিকানা বদলে নজরুল ঠাঁই নিলেন মূল কৃষ্ণনগর শহরের খানিক বাইরে চাঁদ সড়ক পাড়ায় গ্রেস কটেজে। যে গ্রেস কটেজে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল হয়ে উঠেছিলেন প্রেমের কবি। পরশুরামের কঠোর কুঠার বদলে যায় অর্ফিয়াসের বাঁশিতে। নির্জনতা আর দারিদ্র্যের মধ্যে বিকশিত হলেন অন্য নজরুল।
অভাব-দারিদ্র্যের সঙ্গেই সরস্বতীও যেন এই সময় বাসা বাঁধলেন তাঁর কলমে। লিখলেন একের পর এক চমকে দেওয়া কবিতা। ‘মৃত্যুক্ষুধা’-র মতো উপন্যাস। ছাত্র-যুব সম্মেলনে লিখলেন— ‘আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল’ কবিতাটি। নজরুলের হাতে বাংলা গানের ধারার বিরাট পরিবর্তন ঘটে এখানেই। উর্দু ভাষার গজলকে বাংলায় রূপান্তরিত করে বাংলা গানের নতুন ধারা তৈরি করেন।
কৃষ্ণনগর পাওয়ার হাউজের ভিতরে অবস্থিত এ হেন গ্রেস কটেজকে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ২০১২ সালে হেরিটেজ স্মারক হিসেবে ঘোষণা করেন। সুজন বাসর নামে এক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে গৌরব এবং আবেগের এই ভবনের। তাদের প্রচেষ্টায় এই বাড়িতে তৈরি হয়েছে গ্রন্থাগার। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে ক্রমশ জীর্ণ হয়ে পড়ছিল নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য এই বাড়িটি। বিদ্যুৎ দফতর ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাড়িটি এক বার সংস্কার করেছিল। কিন্তু মেরামতের কয়েক বছরের মধ্যেই ফের ছাদ দিয়ে জল পড়ে বিবর্ণ হতে শুরু করে। গ্রন্থাগারের অসংখ্য বই জল পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। দাবি ওঠে, গ্রেস কটেজ সাজিয়ে তোলার।
অবশেষে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন পূর্ত দফতরের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলেছে সেই ভবন। সুজন বাসরের সহ সম্পাদক রতনকুমার নাথ বলেন, “অত্যন্ত যত্ন নিয়ে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। নতুন করে ছাদ হয়েছে। খিলান থেকে দরজা জানলা, রং— সব এক রাখার চেষ্টা হয়েছে। সব মিলিয়ে, ৩৬ লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।”
শুক্রবার দিনভর গ্রেস কটেজে নানা অনুষ্ঠানে নজরুল স্মরণের পাশাপাশি নতুন করে সেজে ওঠা ভবনের উদ্বোধন করেন নদিয়ার সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু। উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান রীতা দাস-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। সকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিকালে প্রদর্শিত হয় মুজিবর রহমান পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘নজরুল জীবন পরিক্রমা।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy