টানা দু’টো ক্লাস নেওয়ার পরে মনটা কেমন উসখুস করে নদিয়ার একটি স্কুলের রসায়নের শিক্ষকের। সটান শৌচাগারে ঢুকে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে তড়িঘড়ি তিনি যান পরের ক্লাসে।
মুর্শিদাবাদে এক স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক আবার টিফিন পিরিয়ডে চা খাওয়ার পরে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে পারেন না। চা শেষ করেই তিনি চলে যান স্কুল লাগোয়া দোকানে। সেখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট শেষ করে ফিরে আসেন স্কুলে।
এমনটাই চলছিল এত দিন। চলছিল মানে? কারণ, এ বার স্কুল চত্বরকে তামাকমুক্ত করার নির্দেশ দিল রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি ওই দফতরের যুগ্ম সচিব জেলায় এই নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার থেকে শুরু করে জেলাশাসক, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক), উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিল ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে সেই নির্দেশিকার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।
তামাক নিষিদ্ধ আইন, ২০০৩ অনুযায়ী সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে — ১) স্কুলে সবাই দেখতে পাবে এমন জায়গায় ‘ধূমপানমুক্ত এলাকা’ কথাটা লিখতে হবে। প্রকাশ্যে ধূমপান যে নিষিদ্ধ, সে কথাও উল্লেখ করতে হবে। ২) বোর্ডে লিখতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে সিগারেট ও অন্য তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা নিষিদ্ধ ও তা জরিমানা-সহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ৩) কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধোঁয়াযুক্ত কিংবা ধোঁয়াহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবে না। ক্যান্টিন এবং হস্টেলেও এই নিয়ম মানতে হবে। ৪) কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী ১০০ গজের হিসেব কষতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচিল থেকে। ৫) স্কুল চত্বরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা বা কাউকে দেওয়া যাবে না। এই সব আইন মেনে চলা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নিবিড় নজরদারি চালাতে হবে।
মুর্শিদাবাদ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, “সব স্কুল যাতে এই নিয়ম মেনে চলে সে বিষয়ে আমরা নজর রাখব।” জেলাশাসক পি উলগানাথন বলছেন, “এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে। তাই বছরের বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজে এ বিষয়ে প্রচার ও সচেতন করা হয়। নতুন নির্দেশিকা এলে তাও কার্যকর করা হবে।”
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “নির্দেশিকা পেয়েছি। স্কুলগুলোতেও তা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হবে।” নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমলেন্দু সিংহরায়, বহরমপুরে হিকমপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, “আমরা নির্দেশিকা পেলে তা মেনে চলব।’’
তা হলে কি স্কুল চত্বরে সুখটানের দিন শেষ হয়ে গেল? ম্লান হেসে এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘সিগারেট কিংবা তামাকজাত যে কোনও জিনিসই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সেটা জেনেও দিনের পর দিন জ্ঞানপাপীর মতো কাজ করছি। এই নতুন নির্দেশিকার চাপে দেখি এ বার নেশাটা একেবারে ছাড়তে পারি কি না!’’
(সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy