Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোট আসে যায়, মেলে না শুধু পরিস্রুত পানীয় জল

এ বারও পানীয় জলের সঙ্কট ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে কান্দির পুরভোট। ২০০৯ থেকে ’১৫—ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারেনি, এই অভিযোগে পুর-প্রচারে সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। বসে নেই কংগ্রেসও। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্যেই কাজ এগোচ্ছে না বলে পাল্টা যুক্তি খাড়া করে জোরকদমে প্রচারে নেমেছে তারাও।

বিকল নলকূপ। ছবি: কৌশিক সাহা।

বিকল নলকূপ। ছবি: কৌশিক সাহা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৯
Share: Save:

এ বারও পানীয় জলের সঙ্কট ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে কান্দির পুরভোট।

২০০৯ থেকে ’১৫—ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারেনি, এই অভিযোগে পুর-প্রচারে সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। বসে নেই কংগ্রেসও। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্যেই কাজ এগোচ্ছে না বলে পাল্টা যুক্তি খাড়া করে জোরকদমে প্রচারে নেমেছে তারাও।

কান্দি পুরসভার বাসিন্দাদের জলকষ্ট দূর করতে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী ২০০৯ সালে ‘জওহরলাল নেহরু আর্বান রিউয়াল মিশন’-এর শিলান্যাস করেন। তারপর ২০১০-এ কান্দি পুরভোট, ২০১১ সালের বিধানসভা, ২০০৯ ও ২০১৪ সালের দু’টি লোকসভা ভোট মিটেছে। কিন্তু, জলপ্রকল্পের কাজ বিশেষ এগোয়নি। পাইপ লাইন বসানোর কাজের গতি শ্লথ। ফলে মেটেনি চেনা জলকষ্টও। অথচ মজার ব্যাপার—সব ক’টি ভোটেই প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল পানীয় জল। কয়েক বছর গড়িয়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ৩৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এ বারের ভোটেও বিষয়টি ওঠায় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, “প্রতিশ্রুতি শুনে তো ছ’বছর কেটে গেল! সমস্যা কবে মিটবে—নেতারা বলবেন?’’

পুরসভা সূত্রে খবর, কান্দি পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৩৯,১১৯ জন। প্রায় ৬৫ হাজার বাসিন্দারা বসবাস। তা ছাড়া কান্দি মহকুমার সদর শহর হওয়ায় কান্দি, বড়ঞা, খড়গ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ নম্বর মোট পাঁচটি ব্লকের কয়েক হাজার বাসিন্দা জরুরি কাজে এই শহরে নিত্য যাতায়াত করেন। ফলে সব মিলিয়ে শহরে পানীয় জলের চাহিদা তুঙ্গে। কান্দি শহরে পানীয় জল সরবরাহের জন্য ১৭টি পাম্প রয়েছে। আরও আছে প্রায় সাড়ে ছ’শো অগভীর নলকূপ। তারপরও জল-সঙ্কট কেন?

বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌতম রায়ের দাবি, “নলকূপ খারাপ হলেই সংস্কার করা হয়। পাইপলাইন থেকে রাস্তার পাশের নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু, যতটা জলের জোগান দরকার ততটা নেই।’’ বিদায়ী পুরপ্রধানের ব্যাখ্যা, ‘‘শহরে দৈনিক আড়াই লক্ষ গ্যালন জল সরবারাহ হয়। কিন্তু, চাহিদা চার লক্ষ গ্যালনেরও বেশি।’’

এই পরিস্থিতিতে সমাধান তথা একমাত্র বিকল্প—গঙ্গাজলের প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণ। সকলেই মানেন, সেটা শেষ হলেই আর সমস্যা থাকবে না। তারপরও প্রকল্পের শ্লথগতিতে ক্ষুব্ধ কান্দির বাসিন্দারা। সেই ক্ষোভের কথা অজানা নয় রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীদেরও। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল। তৃণমূলের মুর্শিবাদাদ জেলার কার্যকারি সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডলের অভিযোগ, “অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস বাসিন্দাদের ভাঁওতা দিয়ে ভোট নিয়েছে। তার বড় প্রমাণ কান্দির গঙ্গাজলের প্রকল্প।” বিদায়ী কাউন্সিলার সিপিএমের বলাই চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “বাসিন্দাদের জলকষ্টের কথা বারবার বোর্ড মিটিংয়ে তুলেও লাভ হয়নি। প্রচারে নেমে জল নিয়ে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের ব্যর্থতার কথা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছি।” বিজেপিও একই বিষয় নিয়েই প্রচার করছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী টুম্পা ধরের কথায়, ‘‘কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের ব্যর্থতার কথা তুলে বহু সমর্থন পাচ্ছি।’’

বিরোধীদের বক্তব্য নস্যাৎ করেছেন কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার। তাঁর দাবি, “রাজ্য সরকারের উদাসীনতাতেই প্রকল্পের এই হাল! বারবার দরপত্র করা হলেও কাজ হচ্ছে না। কোন প্রযুক্তিতে, কী ভাবে গঙ্গা থেকে জল তোলা হবে, তা নিয়েও নানা বিতর্ক তৈরি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রকল্পকে পিছিয়ে দিচ্ছে রাজ্য। এতে পুরসভার কিছু করার নেই।’’ ভোটের পরে এ নিয়ে আন্দোলনে নামার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE