প্রতীকী ছবি।
বাপ-দাদার আমল থেকে রুপোলি নদীই তাদের কখনও ভাসিয়ে দেয় কখনও বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনে ডাঙায়। অনন্ত পদ্মা, আর দিবারাত্র তার বুকে গাঙভাসি হয়ে মাছ ধরা— এই চেনা ছন্দের পদ্মাময় জীবনটাই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে তাঁদের কাছে।
মৎস্যজীবী হিসেবে পরিচয়পত্র না থাকায় পেশাটাই কেমন প্রশ্ন চিহ্নের সামনে ঝুলে গিয়েছে তাঁদের। কখনও বিএসএফ, কখনও বা ও পাড় থেকে উড়ে আসা বিজিবির হুমকিতে টালমাটাল পদ্মার মৎস্যজীবীরা। আর পরিচয়পত্র না থাকায়, সীমান্ত চৌকির আগাছা পরিষ্কার থেকে মাটি কোপানো সবই করতে হচ্ছে তাঁদের। এমনই অভিযোগ করেছেন মৎস্যজীবীরা। ভোরের বদলে তাই তাঁদের পদ্মায় নামতে হয় বেলা গড়িয়ে। ফিরতে হয় বিকেলে। মৎস্যজীবীদের দাবি, কম করে আধ ঘণ্টা ক্যাম্পে কাজ না করলে পদ্মায় নামতে দেয় না বিএসএফ।
সে কথা মানছে না বিএসএফ। তাদের পাল্টা দাবি, মাছ ধরার নামে অনেক সময় জালে জড়িয়ে কাশির সিরাপ পাচার করে মৎস্যজীবীরা। ব্যাটালিয়নের এক অফিসার বলছেন, ‘‘আমরা খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে একটু দেরি হয়। দেশের নিরাপত্তা আর পাচার রুখতে ওইটুকু আমাদের করতে হবে।’’ পদ্মার ভাঙনে ভিটে হারিয়েছে লালকুপের বাসিন্দারা। তার পরে অবৈধ কাপড়া জালের দাপটে নিজেদের পেশা সঙ্কটে। এখন তার সঙ্গে দোসর হয়েছে, পরিচয়পত্র না থাকার সমস্যা। রানিনগরের লালকুপ কলোনির বাসিন্দা মইদুল শেখ বলেন, ‘‘বাপ দাদার আমল থেকে মাছ ধরে আসছি। এটা করেই চলে আমাদের সংসার। একে কাপড়া জালের দাপটে নদীতে মাছ কম। রাতে মাছ ধরা বন্ধ। ফলে দিনভর পরিশ্রম শেষে আয় প্রায় শূন্য। তার পরে পরিচয়পত্র না থাকার এখন পেটে দানা জোটে না।’’ আর এক মৎস্যজীবী সিদ্দিক শেখের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসনের দরবার করেছি। ফল হয়নি। হবে হচ্ছে বলেই খালাশ। এখনও আমাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি।’’
রানিনগর বিডিও আশিস রায় বলেন, ‘‘প্রকৃত মৎস্যজীবীর পরিচয় পত্র পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। ওর জন্য নির্দিষ্ট দফতর আছে। সেখানে গেলে তাদের কার্ড হয়ে যাবে।’’ যদিও বাস্তব বলছে অন্য কথা। লালকুপ মৎস্যজীবী সমব্যায় সমিতির কর্তা জুলফিকার আলির কথায়, ‘‘ওই কার্ড করার জন্য একটা নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেটা চাইতে গেলে বলে জেলা থেকে সেই ফর্ম আসেনি। ফিরিয়ে দেওয়া হয় আমাদের।’’
জাল নিয়ে নিশ্চুপ নদী চরে বসে থাকা লালকুপের সিকান্দর আলি তাই পদ্মার দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করেন, ‘‘হয় আমাদের গিলে খা, না হয় পরিচয়পত্র দে, এ আর সহ্য হয় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy