উৎসবের-প্রস্তুতি: মঙ্গলবার ইসলামপুরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
এ বার ইদে কী করা যায়?
প্রশ্নটা উঠেছিল বিকেলের আড্ডায়। ভৈরবের পাড়েই ওঁদের আড্ডা চলছিল। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘পেয়েছি! পেয়েছি!’’
বাকিরা হতভম্ব। কী হল রে বাবা?
হামিদুল বলে চলেন, ‘‘এ বার ইদ মঙ্গলবার, ৫ জুন। তা হলে কী দাঁড়াল? ইদ ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস একই দিনে।’’
সকলে তখনও অন্ধকারে। হামিদুল যা বলছেন তা তাঁরা ধরতে পারছেন না। হামিদুলের সঙ্গী শরিফুল শেখ, ভাস্কর দেবনাথ, আলো সরকাররা সমস্বরে বললেন, ‘‘ভাই, সবই তো বুঝলাম। কিন্তু ইদে আমরা ঠিক কী করছি?’’
মুচকি হাসছেন হামিদুল, ‘‘এ বারে আমাদের ইদের থিম পরিবেশ। আমরা ইদের উৎসবও করব। একই সঙ্গে সবাই মিলে এই মরা নদীর হারানো স্রোতকে আবার ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারও করব।’’ বাকিরাও এ বার হইহই করে ওঠেন, ‘‘দারুণ আইডিয়া। এ বার কী করতে হবে, তাই বলো!’’
রমজান সম্পর্কে এ তথ্যগুলি জানতেন?
ব্যস! শুরু হয়ে গেল প্রস্তুতি। ঠিক হল জলহারা নদীর বুকেই আয়োজন করা হবে ইদের অনুষ্ঠানের। মঞ্চে যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে, তেমনি নদী নিয়েও আলোচনা করবেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
হামিদুলের যুক্তি, ‘‘সবথেকে বড় কথা, আমরা সকলেই কমবেশি নদী নিয়ে হা-হুতাশ করি। কিন্তু ক’জন সত্যি সত্যিই নদীর এই চেহারা দেখতে পাই? যাঁরা আমাদের এই অনুষ্ঠানে আসবেন, তাঁরাই নদীর চেহারা দেখে শিউরে উঠবেন। সেটা খুব কাছ থেকে দেখাতে ও সকলকে সচেতন করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’
কিন্তু এ-ও তো নদীর বুকে আর একটি অত্যাচার? হামিদুল ও তাঁর সঙ্গীরা বলছেন, ‘‘নদীর বুকে চাষআবাদ, বাড়ি তৈরি, রাস্তা নির্মাণ, মাটি কাটার মতো হাজারও অত্যাচার বন্ধ করতে এটাই হবে নদীর বুকে শেষ অত্যাচার। এই কথাটাই এলাকার সবাইকে বোঝাব বলেই এত জায়গা থাকতে আমরা সবাইকে নদীর বুকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’
ইসলামপুরের ওই যুবকদের কথাটা যে কথার কথা নয় তা বিলক্ষণ জানেন এলাকার লোকজন। ইসলামপুরের নসিয়তপাড়ায় সরস্বতী পুজো হত না। লোকজন সেই সময় চলে যেতেন ভিন্গ্রামে। হামিদুল ও তাঁর সঙ্গীরাই গত বছর থেকে গ্রামে সরস্বতী পুজো শুরু করেছেন। পুজোর যাবতীয় দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা।
ইসলামপুরের বাসিন্দা ধীমান দাস বলছেন, ‘‘নদীর বুকে মেলা শুনে আমিও প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু ওঁদের উদ্দেশ্যটা শুনে আমিও ওঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আমরা সবাই নদীকে ছুঁয়েই নদী বাঁচানোর পণ করব।’’
নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘ইদ খুশির উৎসব। আর নদী খুশি থাকে জলে। খুশির দিনে এমন পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে আমার আবেদন, এই প্রচার, সচেতনতা যেন থেমে না থাকে। লাগাতার এই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।’’
একটা সময় সারাবছর ভৈরবে জল থইথই করত। ভৈরবের উপরেই ভরসা করেই দিন গুজরান করতেন চাষি ও মৎস্যজীবীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভৈরবের উৎসমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার পরে যেটুকু জল থাকত তা-ও মানুষের অত্যাচারে হারিয়ে গিয়েছে।
সেই জলহারা ভৈরবে স্রোত ফেরানোর ডাক দিয়ে ম্যারাপ বাঁধছেন হামিদুল, শরিফুল ভাস্করেরা। আর তাঁদের উপরেই ভরসা করে বুক বাঁধছে ইসলামপুরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy