Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দেওয়া হল না পরীক্ষা

বার্ষিক পরীক্ষা দিতে আর দেওয়া হল না ছেলেমেয়ের। ফলে বছর নষ্ট হতে চলেছে দুই  পড়ুয়ার।

 বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ অন্য নেতাদের পথ আটকালেন তৃণমূলকর্মীরা। শুক্রবার সাহেবডাঙায় (নীচে)। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ অন্য নেতাদের পথ আটকালেন তৃণমূলকর্মীরা। শুক্রবার সাহেবডাঙায় (নীচে)। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর: শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

বিষমদ-কাণ্ডে মারা গিয়েছেন বাবা। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে আর দেওয়া হল না ছেলেমেয়ের। ফলে বছর নষ্ট হতে চলেছে দুই পড়ুয়ার।

শান্তিপুরের নৃসিংহপুরের বাসিন্দা বাসুদেব মাহাতোর তিন ছেলে, এক মেয়ে। শঙ্কর (২০), সুরজ (১৭) আগেই পড়া ছেড়েছে। ছোট ছেলে সুদামা (১৩) বর্ধমানের কালনা মহিষমর্দিনি ইনস্টিটিউশনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সরস্বতী (১৫) নৃসিংহপুর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পরীক্ষা শুরুর মুখেই বাবার আচমকা মৃত্যুতে দুই পড়ুয়া মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। আপাতত, বছর নষ্ট হওয়া নিয়ে ভাবার মতো পরিস্থিতিতে নেই ওরা। তার চেয়ে অনেক বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সুদামা, সরস্বতীর জন্য। সেটা জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার।

এক দিকে, বিষমদ খেয়ে স্বামীর মৃত্যু। অন্য দিকে, ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। বাসুদেবের স্ত্রী সুন্দরী বুঝতেই পারছেন না ঠিক কোথা থেকে ক্ষত মেরামত শুরু করবেন।

বাসুদেব ছিলেন দিনমজুর। মঙ্গলবার রাতে চন্দনের ঠেক থেকে মদ কিনে বাইরেই তা খেয়ে বাড়ি ফেরেন বাসুদেব। সে সময় সুদামা এবং সরস্বতী পড়ায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বাসুদেবের পেটে-বুকে জ্বালা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতা বাড়লে প্রতিবেশীরা আসেন। আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি ভাইবোনের।

বুধবার ভোরে বাসুদেবকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন চিকিৎসকেরা। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান বাসুদেব।

এ দিন বাসুদেবের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মেয়ে সরস্বতী ঘরের কাজ করছে। তিন ছেলে বাবার পারলৌকিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। মামা মারা যাওয়ার খবর শুনে বাড়িতে এসেছেন সন্তোষ মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘দু’লক্ষ টাকা তো পেলাম। কিন্তু এ দিয়ে সংসার খরচ কতদিন চলবে? আর ওদের পড়ার খরচ-ই চালাবে কে?

বিষমদ-কাণ্ডে মারা গিয়েছে চোলাই কারবারি চন্দন মাহাতো ও তার ভাই লক্ষ্মী। একই রাতে দুই ছেলেকে হারিয়ে মা চন্দ্রাবতী বলছেন, “বছর দুয়েক আগে চোলাইয়ের ব্যবসা শুরু করে। অনেক বার বারণ করেছি। তা-ও শোনেনি।’’ বাড়িতে চন্দনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লছমিলিয়া মাহাতো এবং তিন বছরের ছেলে। তিনি বলছেন, “মানুষটা তো চলেই গেল। এখন এই সন্তান আর যে আসছে, তাদের মানুষ করব কী ভাবে?’’

বুধবার দিনভর গ্রামের মানুষ চন্দনের বাড়িতে এসে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অবশ্য সে ক্ষোভ স্তিমিত হয়েছে খানিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch Illegal Hooch Adulterated Hooch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE