জমিতে এ ভাবেই তুলে রাখা ছিল পেঁয়াজ। নিজস্ব চিত্র।
এ যেন গোদের উপর বিষ ফোঁড়া। জানুয়ারিতে শিলাবৃষ্টির পর এপ্রিলের ফের বৃষ্টি ডাহা লোকসানের কবলে ফেলেছে সুতির কয়েকশো পেঁয়াজ চাষিকে। সুতির চাষিদের ঘুরে দাঁড়াবার শেষ চেষ্টাও এপ্রিলের বৃষ্টির জলে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। জলে ভেজা পেঁয়াজ তাই এখন জলের দামে বিক্রি হচ্ছে সুতিতে। ৬ টাকাতেও নিতে চাইছে না মহাজনে। ফলে মাথায় হাত পড়েছে পেঁয়াজ চাষিদের।
কৃষি দফতর জানিয়ে দিয়েছে, পেঁয়াজ চাষিরা শস্য বিমার আওতায় না থাকায় কানাকড়িও ক্ষতিপূরণ পাবেন না কোনও চাষি। অন্য চাষিরাও কবে ক্ষতিপূরণ পাবেন, তাও ঠিক নেই।
কৃষি দফতরের রিপোর্ট, জানুয়ারিতে শিলাবৃষ্টিতে সুতির দুই ব্লকে ৩৬টি মৌজায় কয়েক মিনিটের ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি।
পেঁয়াজ, রসুন, কপি, সর্ষে, খেসারি, মুসুর, কপি, ঢেঁড়শ সহ যাবতীয় আনাজের ক্ষতি হয় জানুয়ারির শিলাবৃষ্টিতে। সুতি ২ ব্লকে ১৯৭১ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পেঁয়াজের। ৬২৫ হেক্টর। এর পরেই সর্ষেয় ক্ষতি ৫৪৬ হেক্টরের। অন্য আনাজের ক্ষতির পরিমাণও ৪৪০ হেক্টর। প্রায় ৮ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সুতি ১ ব্লকেও ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ হেক্টর।
সুতি ২ ব্লকে ১৭ হাজার চাষি এই বিপর্যয়ে শস্যবিমায় ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন। ৩ মাস পেরিয়েও কোনও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ভরসা নেই চাষিদের। কৃষি দফতরের জঙ্গিপুরের সহকারি কৃষি অধিকর্তা উত্তম কোনাই বলছেন, “পেঁয়াজ যেহেতু কৃষি ফসলের মধ্যে পড়ে না তাই শস্য বিমায় কানাকড়িও ক্ষতিপূরণ পাবেন না পেঁয়াজের কোনও চাষি। আনাজ, পেঁয়াজ, রসুন, আলু সহ অন্যান্য ফসলগুলি উদ্যান পালন দফতরের নিয়ন্ত্রণে। সেগুলির জন্য কোনও বিমা নেই । সে সব ক্ষেত্রে চাষিদের সাধারণ বিমার মতো নিজের খরচে বিমা করে নিতে হয়। সুতির কোনও চাষিই তা করেননি। কিন্তু চাষিরা সব ফসলকেই বাংলা শস্য বিমার আওতায় ধরে নিয়ে বিমা পাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন। আর অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও বিমার ক্ষতিপূরণ পেতে এক বছর তো লাগবে বটেই।”
জানুয়ারির শিলা বৃষ্টিতে গাছের মাটির উপরের অংশ ভেঙে গেলেও যেহেতু শিকড় অক্ষত ছিল তাই চাষিদের চেষ্টায় ফের সে গাছ উঠে দাঁড়ায়। ফলনও হয়, তবে অনেক কম। সেই পেঁয়াজ ঘরে তোলা হচ্ছিল। তার মধ্যেই নামে ফের বৃষ্টি।
লোকাইপুরের প্রবীণ চাষি বৃহস্পতি মণ্ডল। বলছেন, “চাষে ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবার পরের বছর চাষ করেই তা পুষিয়ে নিই। এ বার এক লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে চাষে সারের দোকানে আর ব্যাঙ্কে। ফসল হলে তা মিটিয়ে দিতে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে সংসার চালানোটাই দায় হয়ে উঠবে।” একসময়ে পঞ্চায়েতে উপ প্রধান ছিলেন প্রভাত মণ্ডল। বলছেন, “কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি আটকানোর কোনও পরিকল্পনাই নেই কোনও সরকারের। রাজনৈতিক নেতারাও কখনও চাষের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চাষিদের পাশে দাঁড়ায় না। দুঃখের বিষয় হল, না বিধানসভায়, না লোকসভায় কখনও কেউ এই ক্ষতি নিয়ে মুখ খোলেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy