Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ঝাড়াই যন্ত্রে জড়িয়ে মৃত্যু

সোমবার রাতে সেই কাজ করতে গিয়েই যন্ত্রে মাথা ও শরীরের উপরের অংশ জড়িয়ে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হল মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙ্গা  সবজিপাড়ার হুকুম আলি শেখের (২৭)। 

ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। ইনসেটে, হুকুম শেখ। নিজস্ব চিত্র

ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। ইনসেটে, হুকুম শেখ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
করিমপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

জমিতে এ বার মুসুর ডালের ফলন ভাল হয়েছে। মায়ের গহনা বন্ধক দিয়ে মাত্র বারো দিন আগে ফসল ঝাড়াইয়ের যন্ত্র কিনেছিলেন তিনি। রবিশস্য ঝাড়াইয়ের মরসুম শুরু হতেই সাত দিন আগে বাড়ি থেকে যন্ত্র নিয়ে বেরিয়েছিলেন। বিভিন্ন জমিতে ঘুরে ফসল ঝাড়াইয়ের কাজ করতেন। সোমবার রাতে সেই কাজ করতে গিয়েই যন্ত্রে মাথা ও শরীরের উপরের অংশ জড়িয়ে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হল মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙ্গা সবজিপাড়ার হুকুম আলি শেখের (২৭)।

এই ঘটনায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন আরও এক বার সামনে এসেছে। এই শ্রমিকদের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ নিয়েও পরিবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে। জেলার ন্যূনতম মজুরি পরিদর্শক ভোলানাথ ঘোষ জানান, এই ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বলে তাঁর পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম যদি আগে থেকে ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনায়’ নথিভুক্ত করা থাকে তা হলে তিনি দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। তবে প্রশ্ন হল, সামাজিক সুরক্ষা যোজনার ব্যাপারে এবং তাতে নাম নথিভুক্ত করার ব্যাপারে এই মানুষগুলিকে জানানোর পরিকাঠামো এখনও সে ভাবে নেই। বেশিরভাগ অসংগঠিত শ্রমিক সচেতনও নন। যন্ত্রে জড়িয়ে মৃত হুকুম আলি শেখের বাবা খেদু শেখ যেমন বলেন, ‘‘ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে জানি, তবে সুরক্ষা যোজনায় নাম আছে কিনা বা সে সম্বন্ধীয় কাগজপত্র আছে কিনা বলতে পারছি না। ও কখনও কিছু জানায়নি।’’

গত ডিসেম্বর মাসে কল্যানীতে নির্মীয়মাণ এমসের পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল সালতাব শেখ (৩৫) নামে এক শ্রমিকের। তাঁর বাড়ি ছিল মালদহের কালিয়াচক এলাকায়। শ্রম দফতরের তরফে তখন জানানো হয়েছিল, যে সংস্থা নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে তারা শ্রম দফতরের নিবন্ধিত। যেহেতু ওই সংস্থার শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় মারা গিয়েছেন তাই ওই সংস্থা শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে বাধ্য।

পুলিশ ও স্থানীয় স্থানীয় সূত্রের খবর, হুকুম আলির একটি ট্র্যাক্টর ও একটি ফসল ঝাড়াই যন্ত্র (হপার) ছিল। এলাকার চাষিদের জমিতে গিয়ে তিনি ফসল ঝাড়াই করতেন। শুক্রবার রাতে মুসুর ডাল ঝাড়াই করার সময় যন্ত্রে কিছু শুকনো মুসুর গাছ আটকে গিয়েছিল। তখন যন্ত্র চালু থাকা অবস্থাতেই যন্ত্রের ঢাকনা খুলে তিনি আটকে যাওয়া গাছ বের করার চেষ্টা করছিলেন। আচমকা তাঁর মাথায় বাঁধা গামছা চলন্ত যন্ত্রের ভিতর বড় পাখায় জড়িয়ে যায়। সময়মতো সেই গামছা ছাড়াতে পারেননি তিনি। মুহুর্তে তাঁর মুখ, গলা, বুক যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই সময় মাঠে উপস্থিত লোক জন যন্ত্র বন্ধ করে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ বের করেন। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

এ দিন হুকুম আলির বাড়িতে আত্মীয় প্রতিবেশীরা ভেঙে পড়েছিলেন। কথা বলার মত অবস্থায় ছিলেন না হুকুমের স্ত্রী রিমা বিবি। তিন ও দুই বছরের দুই ছেলে মায়ের পাশেই বসে ছিল চুপ করে। হুকুম আলির বাবা খেদু সেখ বলেন, “চার ছেলের মধ্যে হুকুম ছোট। আমার মাত্র আড়াই বিঘা জমি রয়েছে। অভাবের কারণে হুকুম ভিন রাজ্যে কাজ করত। পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেছিল। মুরুটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত ফসল ঝাড়াইয়ের কাজ করে সবজিপাড়ায় ওর শ্বশুরবাড়িতেই থাকত। বাড়িতে ওই ছিল একমাত্র রোজগেরে। এখন কী ভাবে সংসার চলবে জানি না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Hopper Farmers Death Agricultural Machine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE